শ্রীমঙ্গলে পর্যটক খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়ী উদ্ধার-আটক একজন

বিশেষ প্রতিনিধি:
শ্রীমঙ্গলে লেমন গার্ডেন রিসোর্টে পর্যটক খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত কার ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় তিন দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত ঘটনার সাথে জড়িত মূল তিন জন আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। যদিও পুলিশ আসামীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান।
শ্রীমঙ্গলে গত শনিবার রাতে উপজেলার ডলুবাড়ি এলাকায় লেমন গার্ডেন রিসোর্টে অন্য তিন বন্ধুর হাতে নির্মমভাবে নিহত হন নরসিংদী জেলার রায়পুর উপজেলার হাটু ভাঙ্গা এলাকার কামরুজ্জামান এর ছেলে শরীফুল ইসলাম (৪১)।
এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের একটি দল আসামীদের ধরতে ঢাকা গুলশান এলাকায় ৪৩/ এ রোডে ১১৬ মামেন্টু হাউজে অভিযান চালায়। এ সময় ১০ তলা বিল্ডিং এর গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে ঢাকা মেট্রো-গ ২২-৯১৫৬ রেজিষ্ট্রেশন নাম্বারের সাদা রং এর একটি এক্সজিও জি করোলা কার উদ্ধার করলেও এ সময় সেখান থেকে কোন আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে পুলিশ এ ঘটনায় উপজেলার কাকিয়াছড়া এলাকার কাশিনাথ ঘোষের ছেলে শান্ত ঘোষ (২৪) কে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। খুনের ঘটনায় তিন দিন পার হলেও ঠিক কি কারণে শরিফুলকে খুন করা হয়েছে সেই রহস্যের জট খুলতে মূল আসামীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত পুলিশ কোন কিছুর কুল কিনারা করতে পারছে না। তবে পুলিশের নিকট শান্ত ঘোষ স্বীকার করেছে রাব্বি নামে মামলার এজাহার নামীয় আসামী উপজেলার গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফে চাকরির সুবাদে তারা উভয়ে পূর্ব পরিচিত ছিল। খুনের ঘটনার দিন গত রোববার রাব্বিসহ তার আরও দুই জন বন্ধু শান্তকে তার এলাকা থেকে নিয়ে আসে। রাতে তারা লেমন গার্ডেনের বৃষ্টি বিলাস ভিলার ৫ নং কক্ষে খাবার দাবার ও বাহির থেকে এনে মদ খায়। নিহত শরিফুলের হাত লেগে মদের বোতল ভেঙে গেলে রাব্বি উত্তিজিত হয়ে এত দামী মদের বোতল ভাঙার কারণে শরিফুলকে গালাগাল করতে থাকে। এতে তাদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা হয়। পরে তারা রিসোর্টের নিচ থেকে বারবিকিউ জ্বালানোর জন্য কাঠের চিরানো বর্গা দিয়ে শরিফুলের মাথায় ও মুখে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে রাত ৯ টায় রিসোর্ট থেকে পালিয়ে যায় বলে শান্ত পুলিশকে প্রাথমিকভাবে এ ঘটনা জানায়।
তবে পুলিশ মূল আসামীদের না ধরা পর্যন্ত খুনের প্রকৃত ঘটনা রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব নয় বলে জানায়। আসামীদের ধরতে পুলিশসহ আরও বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা কাজ করছে বলে জানা যায়। আসামীদের দ্রুত স্হান বদল করার কারণে তাদের ধরতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে পুলিশ জানায়।
উল্লেখ্য গত ২৫ আগস্ট শুক্রবার সকাল ৮ টার দিকে চাঁদপুরের শাহারাস্তি উপজেলার খাসেরবাড়ি গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে মো. নুরুল আমিন রাব্বি,শরিফুলসহ আরও দুই জন পর্যটক লেমন গার্ডেনে রুম ভাড়া নেয়। পরবর্তিতে তারা শনিবার রাত ৯ টার সময় রিসোর্ট ম্যানেজারকে রুম ভাড়া পরিশোধ করে জানায়,তাদের দুই জন সাথি রুমে রয়ে গেছেন,রোববার দুপুরে চেক আউট করবেন বলে তারা রিসোর্ট থেকে বের হয়ে যান।
এ সময় তারা কৌশল করে ড্রাইভার পরিচয়ে এক জনকে নিয়ে মোট তিন জন চলে যায়। রোববার হোটেল স্টাফ সহিদুল ইসলাম ও রুহান আহমেদ সংশ্লিষ্ট রুমে চেকিংয়ের জন্য গেলে রুমে নক করলে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে তারা জানালার দিকে দেখতে পায় একজন মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে এবং রুমের ভেতর রক্তের দাগ দেখতে পায়।
পরে হোটেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের পর শরিফুলের স্ত্রীকে খবর দিলে শরিফুলের স্ত্রী লাশ গ্রহন করে শ্রীমঙ্গল থানায় তিনজনকে মূল আসামী করে আজ্ঞাত নামা আরও আসামীদের রেখে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এদিকে শরীফুলের স্ত্রী মুন্নী বেগম জানান,শরীফুল ঢাকা ভাটেরা এলাকার ৪০ নং ওয়ার্ডের,ফাঁসের টেক নামক স্থানে ভাঙারির ব্যবসা করত। ‘আমার সাড়ে তিন বছরের মেয়ের জন্মের পর এক রাতের জন্যও কোথাও যায়নি ওর বাবা। ঘুমিয়ে যেত বাবার বুকেই। ওর বাবা খাইয়ে না দিলে কিছুই খেতে চাইত না। এত দিন পর হঠাৎ ভ্রমণে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরতে হলো লোকটাকে। মেয়েটা শুধু বাবা-বাবা করছে। কী জবাব দেব ওকে।’
তিন বন্ধুর সঙ্গে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে গিয়ে নিহত শফিকুল ইসলামের স্ত্রী মুন্নী বেগম লাশ নিতে এসে ওই দিন সাংবাদিকদের নিকট কাঁদতে কাঁদতে এসব কথা বলেন।
মুন্নী বেগম বলেন, তারা ২৪ আগস্ট রাতে রওনা হন। পরের দিন শুক্রবার শ্রীমঙ্গলে পৌঁছেই শফিকুল মোবাইল ফোনে কথা বলেছিলেন মেয়ের সঙ্গে। মেয়েটি তার বাবাকে বলেছিল, তুমি কোথায়, বাসায় আসো। তার বাবা ঠিকই বাসায় আসল, তবে লাশ হয়ে। তাকে ছাড়া এখন আমরা কীভাবে বাঁচব?
শেয়ার করুন