কেঁচো সার উৎপাদন করে খায়রুলের ভাগ্য বদল

মোঃফাহিম মোল্লা, চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আবুবকরপুর ইউনিয়ন রোদ্রের হাটে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করেন যুবক খায়রুল ইসলাম। মূলধন কম হওয়ায় চার বছর আগে নিজ বাড়িতে কয়েকটি গরু নিয়ে গড়ে তোলেন ছোট খামার, কিন্তু অভাব তার পিছু ছাড়ে না। দিনদিন বড় হচ্ছে সন্তানরা। সন্তানদের লেখা পড়ার খরচসহ সংসারে ব্যয় বাড়ছে তার। প্রতিনিয়ত কপালে পড়েছে চিন্তার ভাজ। কিভাবে আয় বৃদ্ধি করা যায়! এমন সময় বেসরকারি সংস্থা পরিবার উন্নয়ন সংস্থার (এফডিএ) পরামর্শে পিরোজপুর গিয়ে তিনি কেঁচো সারের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। এরপরেই শুরু করেন পরিবেশ বান্ধব কেঁচো সার উৎপাদন। চার মাস আগে নিজ বাড়ির আঙিনায় গড়ে তোলেন কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পস্ট উৎপাদনের প্লান্ট যার নাম দিয়েছেন ওজুফা ভার্মি কম্পোস্ট। নিজস্ব খামারের গরুর গোবর দিয়ে কেঁচোর মাধ্যমে প্রক্রিয়া করে ভার্মি কম্পস্ট উৎপাদন করতে পারায় তাকে এই সার উৎপাদনে তেমন ব্যয় করতে হয় না। প্রথম দিকে কম উৎপাদিত হলেও এখন তার প্লান্ট থেকে প্রতিমাসে প্রায় ৫০ মন ভার্মি কম্পস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদিত হয়, প্রতি মণ সার ৭শ টাকায় বিক্রি হওয়ায় মাসে ৩৫ হাজার টাকা আয় হয় তার। প্রতি মাসে ১০০ মণ কেঁচো সার উৎপাদনের টার্গেট থাকে তার। রাসায়নিকমুক্ত হওয়ায় খায়রুলের গ্রামে কৃষকদের মাঝে এই সারের চাহিদা ব্যাপক। উদ্যেক্তা খায়রুল ইসলাম জালালাবাদ বার্তাকে জানান, নিজ বাড়ির ভিতর সার উৎপাদনের ক্ষেত্র হওয়ায় এ কাজে আমার স্ত্রী-সন্তানরা সহযোগীতা করে ফলে আমাকে বাইরের শ্রমিকদের জন্য ব্যয় বহন করতে হয় না। তিনি জানান,পড়ালেখার পাশাপাশি সন্তানরাও আমাদেরকে এ কাজে সহযোগীতা করে। প্রাকৃতিকভাবে রাসায়নিকমুক্ত কেঁচো সার উৎপাদন করতে গোবর কাজে লাগে তাই কম শ্রমে বেশি টাকা আসায় এই সার উৎপাদন শুরু করি। প্রথম দিকে এলাকায় কৃষকদের কাছে কিছুটা অনাগ্রহ থাকলেও এর কার্যকারিতা দেখে এলাকায় এই সার ব্যবহারে ব্যাপকতা বেড়েছে। কেঁচো সার উৎপাদনে শুরুটা বলতে গিয়ে খায়রুল জানান, প্রথম দিকে গরুর খামারের জন্য বেসরকারি সংস্থা এফডিএ থেকে ঋণ নেওয়ার ফলে এফডিএ’র সাথে আমার যোগাযোগ বাড়ে। আমি তাদের সাথে কৃষি বিষয়ক পরামর্শ চাইলে তারা আমাকে কেঁচো সার উৎপাদনে সহায়তার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। এরপর তারা আমাকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেয়। আমাকে আর্থিকভাবেও সহায়তা করে। প্রতিনিয়ত আমার খোঁজখবর নেয়। সার উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিষয়ে খায়রুল বলেন, প্রথমে নতুন গোবর জড়ো করি। প্রায় ১ মাস ঢেকে রেখে পচিয়ে প্রক্রিয়া করে গোবর নাড়াচাড়া করে গন্ধ দূর করে কেচোর হাউজে ফেলি। এই গোবর কেঁচো খেয়ে মলত্যাগ করে। এই মল সারে পরিণত হয়। প্লান্টে ৩০টি হাউজে এই সার উৎপাদিত হয়। ৪-৫ দিন পরপর প্রতি হাউজ থেকে ১০-১৫ কেজি সার উৎপাদন হয়।

শেয়ার করুন