এম.মুসলিম চৌধুরী,নিজস্ব প্রতিবেদক:
যাবতীয় টার্গেট পুরণ করেও প্রথম শেণীর মর্যাদা পাচ্ছেনা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ডাকঘরটি। অথচ প্রধম শেণী মর্যাদা লাভের সকল সক্ষমতা রয়েছে ৩২১০ শ্রীমঙ্গল পোস্ট অফিসটির। প্রথম শেণীতে উন্নিত না হওয়ায় বছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বর্তমানে তৃতীয় শ্রেণীর ডাকঘর হলেও আয় ও গ্রাহক সংখ্যা প্রথম শ্রেণীর পোস্ট অফিসের সমান। শ্রীমঙ্গল পোস্ট অফিসটি প্রথম শ্রেণীর ডাকঘরে রূপান্তরিত না করায় গ্রহকরা বিভিন্ন ধরণের ভুগান্তিতে পড়ছেন। বর্তমানে ডাকঘরটির মাসিক লেনদেন ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা। আর এটি প্রথম শ্রেণীতে উন্নিত হলে তা শত কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টরা বলছেন। প্রাচীনকাল থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা ব্যবসাবানিজ্যের জন্য অন্যতম। একসময় মারোয়াড়ীদের শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা বানিজ্য করতেন। পরে বিট্রিশরা চা বাগান করার পর শ্রীমঙ্গল আরো সমৃদ্ধ লাভ করে। সিলেট বিভাগের মধ্যে শ্রীমঙ্গল ব্যবসা বানিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। সিলেট বিভাগ ও চট্রগ্রাম বিভাগের ব্যবসায়ীরা পাইকারী মালামাল ক্রয় বিক্রয়ের জন্য আসতেন শ্রীমঙ্গলে। আজও পাইকারী ব্যবসার জন্য শ্রীমঙ্গলের সুনাম রয়েছে দেশ জুড়ে।
এদিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা সদর হলেও এখানে রয়েছে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা, রয়েছে বিজিবির সেক্টর, ব্যাটালিয়ন, রয়েছে চা গবেষনা কেন্দ্র, চা বোর্ডেও প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট, পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির মৌলভীবাজার জেলা অফিস, পাওয়ার গ্রিড এর মৌলভীবাজার জেলা অফিস, প্রথম শ্রেণীর রেলওয়ে স্টেশন, রয়েছে র্যাব-৯ এর হবিগঞ্জ মৌলভীবাজার জেলার প্রধান অফিস, রয়েছে আনসার ব্যাটালিয়ান, বন বিভাগের বন্যপ্রাণী সংরক্ষন বিভাগ, জেলা বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক ও রেঞ্জ কর্মকর্তার পৃথক পৃথক কার্যালয়, বিভাগীয় শ্রম কল্যাণ অফিস, জেলা কলকারাখানা অফিস, পদ্মা মেঘনা যমুনার বিভাগীয় ডিপু, রয়েছে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের কার্যালয়। এছাড়াও রয়েছে অর্ধশতাধিক এনজিও, ৪৬টি চা বাগান, বেশ কয়েকটি সরকারী বে-সরকারী রাবার বাগান, রয়েছে পাঁচ তারকা মানের হোটেলসহ অর্ধশতাধিক হোটেল রিসোর্ট। আছে অর্ধশতাধিক ব্যাংক বীমা অফিস। আর হাজার হাজার প্রবাসীতো আছেনই।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা ডাকঘরের ভারপ্রাপ্ত পোস্ট মাস্টার আব্দুল মতিন জানান, চলমান আধুনিক যুগে এ ডাকঘরটি এখনও তৃতীয় শ্রেণীর অফিস হিসেবে আছে। অতচ বহুবছর আগে থেকেই এটি ২য় শ্রেণীর প্রধান ডাকঘরে উন্নিত হতে মাসিক ২০ কোটি টাকার উপরে লেন দেন অতিক্রম করে। বর্তমানে এর লেনদেন প্রায় ৩০ কোটি টাকা, যা প্রথম শ্রেণীর ডাকঘরে উন্নিত হওয়ার টার্গেট। তিনি জানান, বর্তমানে ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতি বিমূখ। একজন গ্রাহক বই জমা দিলে তা মৌলভীবাজার ঘুরে এসে টাকা পেতে সময় লাগে প্রায় ১৫দিন থেকে এক মাস। এখন যে ২৫ কোটি টাকার উপরে আয় হয় তা সঞ্চয় ব্যাংক, সঞ্চয় পত্র, রেজিষ্টার ইস্যু, দৈনিক পার্সেলসহ অনান্য খ্যাত থেকে। তিনি জানান একসময় লেনদেন ছিল প্রায় ৫০ কোটি। সুবিধা না পাওয়ায় এখন কমেছে।
শ্রীমঙ্গল ডাকঘরের অপারেটর সবিতা রানী রায় জানান, শ্রীমঙ্গলে অনেক প্রবাসী রয়েছেন। ২য় ও প্রথম শ্রেণী না হওয়ায় এখানে লোকবল ও অবকাঠামো কম। গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে হলে আগে মৌলভীবাজারে চাহিদা দিতে হয়। চাহিদা অনুযায়ী টাকা আসলে পরে তা দিতে হয়। এতে গ্রাহক তার প্রয়োজনীয় সময়ে টাকা পান না। বার বার গিয়ে খোজ নিতে হয় ডাকঘরে।
শ্রীমঙ্গল ডাকঘরের প্রবীণ গ্রাহক অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক বিরেন্দ্র দেবনাথ বলেন, বিগত ৫৩ বছর ধরে তিনি এই ডাকঘরে লেনদেন করে আসছেন। তার আয়ের অংশ তিনি এখানেই সঞ্চয় করেন। কিন্তু যুগ পাল্টেছে। সব কিছু আধুনিক হয়েছে আধুনিক হয়নি এই ডাকঘরটি। তিনি বলেন, এখান থেকে টাকা উঠাতে হলে কয়েকবার আসতে হয়। আধুনিক বিশে^ কোথাও এমটা করতে হয়না। তিনি বলেন, ২য় শ্রেণী নয় এটি প্রথম শ্রেণীতে উন্নিত হওয়া এখন সময়ে দাবী। এ সময় তিনি আরো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের প্রখর দৃষ্টি জন্য আমাদের দেশের সরকার গরিব, আর জনগনের একটা অংশ ধনি। অতচ উন্নত রাষ্ট্রে সরকার ধনি।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত পোস্ট মাস্টার আব্দুল মতিন আরো জানান, শ্রীমঙ্গল পোস্ট অফিসের ৪৫ শতাংশ জায়গা রয়েছে এর মধ্যে বর্তমান ছোট এই ভবন ছাড়া বাকী জায়গা পতিত। লোকবল বৃদ্ধির পাশাপাশি অচিরেরই প্রয়োজন সম্প্রসারিত ভবন।
শ্রীমঙ্গলের এই ডাকঘরটি বিট্রিশ আমলের। এখন বিট্রিশ আমলের ও পাকিস্তান আমলের সিল রয়েছে এখানে। এটি ২য় শ্রেণীর প্রধান ডাকঘরে উন্নিত না হওয়ায় এখানে লোকবলের চরম সংকট। এদিকে তৃতীয় শ্রেণীর ডাকঘরের জন্যও যেখানে লোকবল দরকার ১৮ জন সেখানে আছে ৯জন।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল পোস্টঅফিস পরিদর্শক আবু সালে মোহাম্মদ আল রাজীব বলেন, শ্রীমঙ্গল শাখা ২য় শ্রেণীর প্রধান ডাকঘরে উন্নিত হলে এই ব্রান্সের নিজস্ব একটি একাউন্ট থাকবে। একাউন্টে সবসময় স্থিতি থাকবে যার মাধ্যমে গ্রাহকদের দ্রুত সেবা দেয়া যাবে।
এ ব্যাপাওে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি বলেন, শ্রীমঙ্গল পোস্ট অফিসটি প্রাচীণ একটি পোস্ট অফিস। এর নাগরিক সেবা বৃদ্ধিতে ২য় শ্রেণীর প্রধান ডাকঘরে উন্নীত হওয়ার প্রস্তাব আসলে “আমি বিগত বছরের ডিসেম্বরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বরাবরে ডিও দেই এবং ব্যক্তিগতভাবে সুপারিশও করি। জনগনের স্বার্থে ও বাস্তবতা নিরিখে মন্ত্রনালয়কে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করছি।