স্বপন রবি দাস, জেলা প্রতিনিধি হবিগঞ্জ:
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানানোর মিছিলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সংঘর্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিকসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর ) দুপুরে নবীগঞ্জ শহরে নতুন বাজার এলাকায় কয়েক দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়- বুধবার রাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে মিছিল বের করা হয়। নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক গতি গোবিন্দ দাশ, সাইফুল জাহান চৌধুরীসহ নেতৃবৃন্দরা মিছিল ও পথসভায় অংশ নেন। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিক ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক লোকমান খানসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী মিছিল ও পথসভায় যোগ দেন। পথসভা শেষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিক তাদেরকে নামাজে রেখে কেন মিছিল শুরু করা হলো এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক গতি গোবিন্দ দাশের কাছে জানতে চান। এক পর্যায়ে বিষয় নিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু ও পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য বাবলু আহমদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা মীমাংসা করার জন্য বৃহস্পতিবার সকালে নবীগঞ্জ শহরের শেরপুর রোডস্থ আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মালিক মিয়ার অফিসে সালিশ বৈঠকে বসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এসময় নেতৃবৃন্দ ঘটনাটির মিমাংসা করে দেন। কিন্তু সেখান থেকে বের হওয়ার পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ মিলুর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে উভয়পক্ষের লোকজনদেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিক (৫৫), পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাবলু মিয়া (৩০), সঞ্জয় দাস (৪০), মিঠু শীল (৩০),সৌরভ তালুকদার (২৫), আনহার আহমদ (৩৫), জিজু মিয়া (৩০), জায়েদ মিয়া (৩২)সহ উভয়ের পক্ষের ১০ জন আহত হন। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ শহরে অবস্থান নেয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল খয়ের। এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী বলেন- ‘রাতের বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দরা বসেন। বিষয়টি মীমাংসাও হয়ে যায়। কিন্তু আমার সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে মোস্তাক আহমেদ মিলু উতপ্ত বাক্য বিনিময় করলে মিলু পিস্তল বের করে আমার দিকে ধরে। এ সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।’ সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ মিলু বলেন- ‘গত বুধবার রাতের ঘটনা মীমাংসার জন্য বসলে সিনিয়র নেতা হিসেবে সিদ্দিক ভাইয়ের সঙ্গে সাজুকে মিলার জন্য বলি। এ সময় সাইফুল জাহান চৌধুরী উশৃঙ্খল কথা বার্তা বলেন এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।’ পিস্তল প্রসঙ্গে বলেন- ‘সাইফুল-সাজুর সঙ্গে তো আমার সঙ্গে কোনো ঝামেলা নেই, আমি কেন পিস্তল বের করবো? নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদ বলেন- ‘বুধবার রাতের ঘটনাটি জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশনায় আমিসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বসে সমাধান করে দেই। কিন্তু এক পর্যায়ে আমাকে অমান্য করে কিছু নেতা তর্কে জড়িয়ে পড়েন, এরপর ঝামেলার সৃষ্টি হয়। নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী বলেন- ‘বুধবার রাতে তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ একটি মিছিল বের করে। মিছিলে একটি পক্ষকে রেখে অপর পক্ষ মিছিল করায় উবয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বিষয়টি মীমাংসার জন্য বসেন পরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।’ বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল খয়ের বলেন- ‘আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে উভয়পক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করি। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।