নিজস্ব প্রতিবেদক:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মণিপুরি সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব মহারাসলিলা শুরু হয়েছে।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর থেকে উপজেলার মণিপুরি অদ্যাসিত গ্রাম মাধবপুর ও আদমপুর শুরু হয়েছে মহারাসলিলা। চলবে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত।
ঐতিহ্যবাহী মহারাসলিলা উৎসব টি ১৮১তম বারের মত উদযাপিত হচ্ছে। বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায় সেবা সংঘ আয়োজনে দুটি গ্রামে বইছে উৎসব আনন্দ। বসেছে বাহারি পণ্যের মেলা। মুণিপুরী পাড়ায় জমকালো আয়োজনে রাসলীলা উৎসব দেখতে দেশের ভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থীরা ভীড় করেন আদমপুর ও মাদবপুর গ্রামে।
তুমুল হৈচৈ, আনন্দ উৎসাহ ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খ ধ্বনীর মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মের অবতার পুরুষ শ্রী কৃষ্ণ ও তার সখি রাধার লীলাকে ঘিরে এই একটি দিন বছরের আর সব দিন থেকে ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসে মণিপুরি সম্প্রদায়ের মাঝে।
প্রতি বছর নির্ধারিত তিথিতে এরাসলীলা উদযাপন করা হয়। রাসলীলা উৎসবে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা দীর্ঘ ১ মাস থেকে গুরুজী কাছ থেকে নৃত্য প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। উৎসবের শুরু হয় গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য দিয়ে। এ নৃত্য হয় সকালে। যারা রাখাল নৃত্য করে, তারা প্রথমে মন্ডপে গোল হয়ে গোপী ভোজন করে। গোপী ভোজন হল বিভিন্ন সবজি দিয়ে রান্না করা তরকারি ও ভাত।এ খাবার খেয়েই রাখাল নৃত্য শুরু করে শিল্পীরা। সকালে শুরু হয়ে রাখাল নৃত্য একটানা চলে বিকেল পর্যন্ত। মণিপুরি শিশু-কিশোররা এ নৃত্য পরিবেশন করেন। যারা নৃত্য করে, তারা এক ধরনের বিশেষ পোশাক পরে। ঝলমলে এ বিশেষ পোশাকের নাম ‘পলয়’। এ পোশাকের পরিকল্পনা করেছিলেন রাজা ভাগ্যচন্দ্র। রাখাল নৃত্যের মূল বিষয় বস্তু হলো কৃষ্ণ ও তার সাথীদের নিয়ে। গোলাকার মন্ডপে কখনও একক, কখনও দ্বৈত এবং কখনও দল বেঁধে এ নৃত্য পরিবেশিত হয়। রাখাল নৃত্যের পাশাপাশি দিনভর চলতে থাকে মণিপুরিদের নিজস্ব সংস্কৃতি।
মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ ও আদমপুর মহারাস উদযাপন কমিটির অন্যতম নেতা ইবুংহাল সিংহ শ্যামল বলেন, এটি আমাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব রাসলীলাকে কেন্দ্র করে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সীমিত পরিসরে ধর্মীয় বিধানমতেই রাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে।
মাধবপুরও আদমপুরে রাসমেলার আয়োজকরা জানিয়েছেন, মহারাসলীলাল মূল উপস্থাপনা শুরু হয়েছে দূপুর থেকে ‘গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য’ দিয়ে।গোষ্ঠলীলায় রাখাল সাজে কৃষ্ণের বালকবেলাকে উপস্থাপন করা হবে। এতে থাকবে কৃষ্ণের সখ্য ও বাৎসল্য রসের বিবরণ।গোধূলি পর্যন্ত চলবে রাখালনৃত্য। রাত ১১ টা থেকে পরিবেশিত হবে মধুর রসের নৃত্য বা শ্রীশ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলানুসরণ। এই রাসনৃত্য ভোর (ব্রাহ্ম মুহুর্ত) পর্যন্ত চলবে। এই রাস নৃত্যে গোপিনীদের সাথে কৃষ্ণের মধুরলীলাই কথা, সারা রাত ব্যাপী গানে ও সুরে ফুটিয়ে তুলবেন শিল্পীরা। কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় কুমার চক্রবর্তী বলেন, রাসোৎসবে নিরাপত্তার জন্য দুই জায়গাতেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে নিরাপত্তায় পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে । তবে এবছর করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিাধ মেনে সীমিত পরিসরে ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে মণিপুরী রাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলার অনুমতি দেয়া হয়নি। লোকসমাগম সীমিত করা হবে।