শীতের সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ

সিরাজুল ইসলাম ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

বাংলাদেশ ষড় ঋতুর দেশ। ঋতু বৈচিত্র্যের কারনে প্রকৃতি সাজে তার বিভিন্ন রুপ নিয়ে। বাংলার রূপ বৈচিত্র্যের অনেকখানি জায়গা জুড়ে শীতের অবস্থান। শীতকাল অন্যসব ঋতু থেকে আলাদা গুরুত্ব পেয়ে থাকে।শীত বাঙালির প্রিয় ঋতু। হেমন্তের সোনালি ডানায় ভর করে হিমেল হওয়া সাথে নিয়ে কুয়াশার চাদর জড়িয়ে আসে শীতকাল। যেকোনো ঋতুই  তার নিজিস্ব বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল, এদেশের মানুষের জীবনযাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও মহিমাময়। এসব কিছুর পরেও মধ্যবিত্ত বাঙালির জীবনে শীত যেন বিশেষ আদরের, দীর্ঘ অপেক্ষার শেষে প্রাপ্তির আনন্দে উজ্জ্বল হলুদ পাতার ঝরা খামে চিঠি আসে শীতের। হিম-শীতল বাতাসে উত্তরের পথ ধরে ঘন কুয়াশার উত্তরীয় গায়ে প্রকৃতিতে শীতের আগমন। পিঠা পুলি আর খেঁজুর রসের মিষ্টি গন্ধে বাংলার ঘরে ঘরে শীত বরণ হয়।পৌষ মাঘ এই দুই মাস শীতকাল। যদিও শীতের আমেজ শুরু হয়ে যায় হেমন্তের অৰ্থাৎ অগ্রায়ণের মাঝামাঝি সময়ে।শীতের সকালের রূপ অন্যসব ঋতু থেকে অনেক আলাদা। হেমন্তের আমেজ শেষ হতে না হতেই প্রকৃতিতে শীতের বুড়ী এসে হাজির। কুয়াশায় ঢেকে যায় নির্জন বন-মাঠ আর নদীর কূল। উত্তর দিগন্তে হিমালয়ের বরফচূড়া থেকে ছড়িয়ে পড়ে হিমশীতল নিঃশ্বাস। প্রকৃতি কেমন যেন জড়োসরো হয়ে যায় শীতে। বিবর্ণ হলুদ পাতারা চুপিসারে খসে পড়ে পথের ধূলোয়। শীতের দীর্ঘ রাতে কুয়াশার আবরণ গায়ে মেখে সুবহে সাদিকে ভেসে আসে আযানের ধ্বনি। গাছে গাছে তখন পাখিদের মুখরিত কলোকাকলিতে ঘুম ভাঙে মানুষের। বাংলার শীতের সকাল সত্যিই অনেক বৈচিত্র্যময়। গাছিরা খেঁজুর রস কাঁধে সারিবদ্ধভাবে হেঁটে চলে পল্লীর গাঁয়ে। পূবাকাশে কুয়াশা ঢাকা ম্লান রোদে উঠোনে পাটি বিছিয়ে ছেলেমেয়েরা  কাঁচা রসে চুমুক দিয়ে শীতের আনন্দে ভাগ বসায়। বাড়ীর আঙিনায় মাচার ওপর, খড়ের চালে শিশিরভেজা শিম, বরবটি, লাউ আর কুমড়ার গাছগুলো অপরূপ দেখায় শীতের সকালে। মাঠভরা সরিষার  হলুদ ফুল মন কেড়ে নেয় প্রতিটি বাঙালির। মটরশুঁটি আর সবুজ ঘাসের ডগায় ঝুলে থাকে শিশির বিন্দু। কুয়াশার ঘন জাল সরিয়ে মিষ্টি রোদের সূর্য নতুন মাত্রা যোগ করে শীতের সকালে।চারিদিকে কুয়াশার বিস্তীর্ণ চাদর, গ্রাম বাংলায় শীতের কুয়াশার দৃশ্য আশ্চর্যজনক দেখায়। ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় সারা গ্রাম। কোথাও কিছু দেখার উপায় নেই. ঘরবাড়ি গ্রাম, জলাশয়, বাঁশঝাড় এবং বিশাল প্রান্তর জুড়ে কুয়াশা আর কুয়াশা। গাছের পাতা থেকে ঝরে পড়া কুয়াশার শব্দ মনকে বিমোহিত করে. শিশিরের ক্ষীণ শব্দ পেছনে ফেলে মন ছুটে তেপান্তরের কলাই ফুলের মাঠে। মাঠে মাঠে কাটা ধানের নাড়ায় জমে থাকে কুয়াশা। খেজুঁর গাছের মাথায় ঝুলে থাকা মিষ্টি রসের হাঁড়িটি শীতের সকালকে করে তোলে কল্পনার রাজ্যের স্বর্গপুরীর মত।  যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির শেষ আঁচড় এটি। সকালের প্রথম রোদে জ্বলন্ত উনুনের পাশে বসে গরম ধোঁয়া উঠা ভাপা পিঠা আর খেঁজুরের রস শীতের সকলকে এনে দেয় এক অন্য রকম মাত্রা। গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে তখন নতুন ধানের চালে তৈরি হচ্ছে সুস্বাধু সব শীতের পিঠা। অফুরন্ত অবসর তাই গ্রাম বাংলার প্রকৃতিতে শীত যেন এক অকৃপণ দাতা। হিমশীতল স্পর্শে কাঁপিয়ে দেয় বাংলার গ্রাম। তখন দল বেঁধে আগুন জ্বালিয়ে তাপ নেয়া বা সকালের রোদ গায়ে মেখে দুপুর গড়িয়ে দেয়া যেন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। এরুপ লক্ষ্য করা যায় দেশের উওর অঞ্চল ঠাকুরগাঁও জেলা। আজ সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ডিগ্রি সেলসিয়াস, ঘনকুয়াশার চাদর আখরে ধরেছে গ্রামীণ সাধারণ জনজীবনকে, বিশেষ করে বিপদে পড়েছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। অটোচালক জাহাঙ্গীর জানান, ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে,এতে সাধারণ যাত্রী সংখ্যা তুলনা মুলক ভাবে অনেক কম এতে আগে যদি আয় হতো ৫০০-৭০০টাকা এখন যাত্রী কম হওয়ায়, দৈনিক আয় রোজকার হয় ৩০০থেকে ৩৫০টাকা। অপর দিকে শিশু সহ বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছে ঠান্ডা জনিত না রোগে বিশেষ করে সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, জ্বর, সহ বিভিন্ন রোগে। অপর দিকে শহর গুলো তে রাস্তার ধারে ধারে জমে ক্রয় বিক্রয়ে উঠেছে শীতের গরম কাপড় যেমন, সোয়েটার, মাপলার, জ্যাকেট,ইত্যাদি। এতে সল্প মূল্যে শীতের কাপড় ক্রয় করতে পেরে খুব খুশি নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ,তবে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ।

শেয়ার করুন