মোঃফাহিম মোল্লা, চরফ্যাশন(ভোলা) প্রতিনিধি:
উচ্চমূল্যের কারণে লাইফ জ্যাকেটের মতো নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি ছাড়া নদীতে মাছ শিকার করতে যায় জেলেরা। এতে প্রতিবছর ভোলার চরফ্যাশন এলাকার অনেক জেলে নদীতে দুর্যোগের কবলে পড়ে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। এমন অবস্থায় নদীতে জাল ভাসিয়ে রাখার কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বল(প্লুট) দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে লাইফ জ্যাকেট। ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত জেলেরা নিজেরাই এই জীবন রক্ষাকারী লাইফ জ্যাকেট তৈরি করছে। তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য অফিস। মেঘনা-তেঁতুলিয়া ও বঙ্গোপসাগরবেষ্টিত দেশের দক্ষিণের দ্বীপ জেলা ভোলা। এই জেলার প্রায় ২ লাখ মানুষ নদী ও সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। জেলার সর্বদক্ষিণের উপজেলা চরফ্যাশন। সমুদ্র উপকূলবর্তী হওয়ায় এখানকার জেলেদের কাছে ঝড়-বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিত্যসঙ্গী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জেলেদের জানমালের ক্ষতিরপরিমাণ অনেকটাই বেড়ে গেছে। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জেলার উপকূলীয় উপজেলা মনপুরায় নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া একটি ট্রলার ডুবে নিখোঁজ হয় ২০ জেলে। তারা বেঁচে আছে না মরে গেছে, জানে না কেউ। এই ট্রলার থেকে বেঁচে আসা মো, হারুন মাঝি বলেন, ‘মাঝনদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে আমাদের ট্রলার ডুবে যায়। মাছ, জাল, মানুষ সবই হারাতে হয়।’ মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় মাছ ধরতে যাওয়া একাধিক জেলে জানায়, নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের উচ্চমূল্য হওয়ায় সব ট্রলারে লাইফ জ্যাকেটসহ নিরাপত্তা সরঞ্জাম থাকে না। তাই প্রতিবছরই বাড়ছে নদী-সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের প্রাণহানি। তবে মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে সম্প্রতি জেলেদের জাল ভাসিয়ে রাখতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বল (প্লুট) দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে একধরনের লাইফ বয়া বা লাইফ জ্যাকেট। যেখানে একটি লাইফ বয়া বা লাইফ জ্যাকেট কিনতে এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা গুনতে হয়, সেখানে এই ভাসমান প্লাস্টিকের বল দিয়ে তৈরি লাইফ বয়ায় খরচ হয় মাত্র ৪০০-৫০০ টাকা। জেলেরা জানায়, ২০টি প্লাস্টিকের বল দিয়ে একটি লাইফ বয়া তৈরি করা যায়। ঝড়-বাদলের সময় একটি লাইফ বয়ায় দুই থেকে তিনজন জেলে নদীতে অনায়াসে ভেসে থাকতে পারে। জেলেদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কম খরচে লাইফ বয়া তৈরির প্রশিক্ষণ দেয় পরিবার উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। ওই সংস্থার প্রোগ্রাম অফিসার অশোক কুমার রায় বলেন, ‘ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরা উপকূলীয় এলাকায় এ পর্যন্ত ১৬৮ জেলেকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। সামনে আরও ৭ হাজার জেলেকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা করা হবে। এখন জীবন রক্ষার তাগিদে জেলেদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে এই লাইফ বয়া তৈরির কৌশল।’ মনপুরা ক্ষুদ্র জেলে সমিতির সভাপতি নাসির মহাজন বলেন, ‘যদি প্লাস্টিকের বল দিয়ে তৈরি এই লাইফ বয়ার কৌশল দেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তবে নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের মৃত্যুর হার অনেকটা কমানো যাবে।’ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় লাইফ বয়া তৈরির কাজকে স্বাগত জানিয়েছেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার। তিনি বলেন, ‘জেলেদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি ওই বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে এর পরিধি কীভাবে বাড়ানো যায়, সেই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে।”