মো:ফাহিম মোল্লা,চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি : একসময় গ্রামের হাট-বাজার গুলোতে খোলামেলা পরিবেশে পিঁড়িতে বসে চুল-দাড়ি কাটানো ও শেভ করা হতো। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাওয়া সেই দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। তবে বিলীনের পথে থাকা গ্রামীণ সেই ঐতিহ্য এখনও ধরে রেখেছেন লক্ষন চন্দ্র শীল (৭২) ও বলায় চন্দ্র শীল (৭০) । এভাবে বাজারের ফুটপাতে বসে তারা কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের প্রায় ৫০ বছর। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষন (লেতরা) বাজারের ফুটপাতে পিঁড়িতে বসিয়ে তারা স্থানীয়দের চুল- দাড়ি কাটেন, করান শেভও। যার আয় দিয়ে কোনো রকমে চলে তাদের সংসার। তাদের কাছে আসেন বিভিন্ন বয়সের লোকজন। এ কাজের জন্য লক্ষন চন্দ্র শীল ও বলায় চন্দ্র শীলদের কাছে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বলতে রয়েছে; চিরুনি, কাপড়, ছোট আয়না, ক্ষুর, কাঁচি ও একটি টুল/পিঁড়ি। উপজেলার এওয়াজপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা এ দুই নরসুন্দর। বলায় চন্দ্র শীল জানান, আগে মানুষজন পিঁড়িতে বসে খোলা আকাশের নিচে এভাবেই চুল-দাড়ি কাটাতেন ও শেভ করতেন। সেই ঐতিহ্য ধরে রেখে গত ৫০ বছর ধরে বিভিন্ন হাটে গিয়ে ফুটপাতে পিঁড়িতে বসিয়ে মানুষের চুল কাটান, করান শেভও। সময়ের পরিবর্তনের সাথে কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে তাদের চুল-দাড়ি কাটার দরও। এখন প্রতিজনের চুল কাটার জন্য ৩০ ও দাড়ি কাটার জন্য ২০ টাকা করে নেন তারা। এতে করে প্রতি হাটে তাদের আয় হয় প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মতো। পেশার সাথে যুক্ত পঞ্চাশ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর বাজারের চিত্র বদলে গেলেও, বদলাননি তারা। তার পরিবারে দুই ছেলে ও এক মেয়ে; দিয়েছেন মেয়ের বিয়েও। তার মতন তার ছেলেয়রা নরসুন্দর পেশায় যুক্ত থাকলেও, ফুটপাতে নয় কাজ করেন সেলুনে। আরেক নরসুন্দর লক্ষন চন্দ্র শীল বলেন, আমাদের কাছে বিভিন্ন বয়সের লোকরা এসে কেউ চুল কাটান, কেউ বা কাটান দাড়ি। কাজ অনুযায়ী একেকজন দেন ২০ থেকে ৪০ টাকা করে। এভাবে প্রতি হাটে দেড় থেকে দুইশত টাকার মত আয় তাদের। আর এই আয়ের টাকা দিয়েই চলে কোনো রকমে চলে সংসার। আমার সংসারে তিন ছেলে রয়েছেন। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ‘সেলুনে চুল-দাড়ি কাটার ইচ্ছে আছে কিনা’ এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানান- পিঁড়িতে বসিয়ে কাজ করানোয় অভ্যস্ত তারা, এখন চাইলেই তা আর সম্ভব না! জীবনের বাকি দিন গুলোতে যে কয়দিন বেঁচে আছি এভাবেই কাজ করে জীবনের ইতি টানতে চাই আমরা। নরসুন্দর লক্ষন চন্দ্র শীলের কাছে চুল কাটাতে ও শেভ করতে আসা কয়েকজন জানান, এদের কাছে কম দামে চুল-দাড়ি কাটানো যায়। শেভ করতেও তারা কম টাকা নেয়। এজন্যই তাদের কাছে আসি। বাজারের সেলুনগুলোতে গেলে এক থেকে দেড়শত টাকা করে দিতে হয় চুল-দাড়ি ও শেভ করতে। বলায় চন্দ্র শীলের কাছে আসা আরেক খদ্দের খোরশেদ আলম বেপারী বলেন, এরা ফুটপাতে বসে চুল-দাড়ি কাটলেও সুন্দর ভাবে তারা কাজ করে দেয় এদের কাছে কম খরচে চুল দাড়ি কাটানো যায়। এক সময় খোলা পরিবেশে বসেই চুল-দাড়ি কাটাতে হতো। কালের বিবর্তনে এখন আর এসব সচরাচর দেখা যায় না।
১৫০ থেকে ২০০ টাকার মতো আয় দিয়ে চলে নরসুন্দরের সংসার
শেয়ার করুন