দুই ফুট উচ্চতার জোসনার জীবন চলছে মানুষের সহায়তায়

মোঃ ফাহিম, নিজস্ব সংবাদদাতা :

প্রায় দুইফুট উচ্চতার ৪৫ বছর বয়সী জোসনা বেগম। জন্ম থেকেই হাত পা ছোট এবং শারীরিক প্রতিবন্ধি। কখনো মানুষের বাড়িতে কখনো বাজরে গিয়ে দোকানে দোকানে সাহায্য উঠিয়ে কোনো রকমে চলছে তার জীবন।

ভোলার লালমোহন উপজেলার বর্তমান মোতাহার নগর ইউনিয়নের ( সাবেক পশ্চিম চর উমেদ) ৮নং ওয়ার্ড কচুয়াখালী এলাকার পাস্তাইন্না বাড়ির মৃত ফজলে করিমের মেয়ে জোসনা।

সরেজমিনে জোসনার সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধি। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে সবার বড়। গত প্রায় ১৫ বছর আগে মা মারা গেছে। মা মারা যাবার পর বাবার সাথেই ছিল জোসনা। বাবাই তার দেখভাল করতো। গত ৫ বছর আগে তার বাবা মারা যায়। এরপর ছোট ভাই আলমগীরের বাসায় থাকছেন তিনি। তবে ছোট ভাইও গরিব মানুষ এবং তার ৩টি সন্তান রয়েছে, দিন মজুরি করে কোনো রকমে দিন পার করছে। তাছাড়া সে লিভারের রোগী ও প্রায় অসুস্থ্য থাকে। আমি খেয়ে না খেয়ে এখনো তার ঘরেই থাকি। ভাই অসুস্থ্য এবং অভাবের কারণে আমি নিজে এলাকার মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাহায্য উঠাতাম। আমি এখন স্থানীয় ও বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দোকানে দোকানে সাহায্য উঠিয়ে কোনো রকমে চলছি। তাছাড়া আমার নামে একটি প্রতিবন্ধি ভাতা রয়েছে, সে ভাতার টাকা ৬ মাস পরপর দেয়া হয়।

জোসনা বেগম আরো বলেন, আমার বাবা মৃত্যুর পূর্বে আমার নামে ১০ শতাংশ জমি দলিল করে দিয়ে গেছেন। আমি টাকার অভাবে সেখানে ঘর করতে পারছি না। সরকারি ভাবে আমার জমিতে যদি আমাকে একটি ঘর তৈরি করে দিত তাহলে নিজ ঘরে একটু শান্তিতে থাকতে পারতাম।

জোসনার ছোট ভাই আলমগীরের স্ত্রী বিবি হাজেরা বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধি আমার ননন জোসনা বেগম আমাদের সাথেই থাকেন। আমরা গরিব মানুষ। আমাদের সংসার কোনো মতে চলছে। আমাদের অভাবের কারণে সে মানুষের বাড়ি ও বাজারে গিয়ে সাহায্য উঠাচ্ছে। তার নিজের নামে যায়গা রয়েছে, সরকারি বা বিত্তবানগণ সেখানে একটি ঘর করে দিলে সে নিজের মতো করে থাকতে পারতো। তাছাড়া তিনি সব কাজ করতে না পারলেও নিজের সকল কাজ নিজেই করেন। ভাত, তরকরি রান্না, পানি আনা, মাছ কাটাসহ বিভিন্ন কাজ করেন।

এলাকার ছিদ্দিক ও কালু বলেন, নাজমা জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধি। আমরাসহ এলাকার মানুষজন সাধ্যমতো তাকে সাহায্য সহায়তা করছি। তার চলাফেরা করতে অনেক কস্ট হয়। তবুও গরিব হওয়ার কারণে মানুষের বাড়ি এবং বাজারের দোকানে গিয়ে সাহায্য উঠিয়ে কোনো রকমে দিন পার করছে। সরকারি ভাবে এবং দেশের বিত্তবানগণ তাকে সাহায্য করলে সে একটু ভালোভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারতো।

লালমোহন উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মাসুদ বলেন, জোসনা বেগমকে সমাজসেবা অফিস থেকে প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড করে দেয়া হয়েছে এবং নিয়মিত ভাতা পাচ্ছে। তাছাড়া তার নিজের জমিতে আমাদের অফিস থেকে শীঘ্রই একটি ঘর তৈরি করে দেয়া হবে।

শেয়ার করুন