বিশেষ প্রতিনিধি,মৌলভীবাজার:
বিগত বছর উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও চলতি বছর চায়ের উৎপাদনে ভাটা পড়েছে। এত শ্রমিক ও বাগান মালিকরা হাশ। এ বছর চায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৮০ লাখ কেজি। কিন্তু বন্যা, খরা, অধিক তাপমাত্রা ও অধিক বৃষ্টিতে পড়ে উৎপাদন মৌসুমের একদম শেষ পর্যায়ে এসেও চায়ের কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায়নি। চলতি বছর চা বাগানগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পুরণ না হওয়াতে এ শিল্পের সাথে জড়িতরা নানা ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়ছেন। প্রকৃতির সবুজ চাদরে মোড়ানো দেড়শত বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের একটি অংশ চা বাগান। দেশে ১৬৮টি চা-বাগানের মধ্যে ৯২টিই অবস্থিত মৌলভীবাজার জেলায়। উচু নিচু আর সমান্তরাল ভূমির যেদিকে চোখ যায় শুধু চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। সেই অপূর্ব দৃষ্ঠি নন্দন চা বাগান আর চাশিল্পের সাথে জড়িত কয়েক লক্ষাধিক চা শ্রমিক জনগোষ্ঠি। এদিকে চলতি বছরের শেষ ভাগে এসে দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এদিকে প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত ও সহনীয় তাপমাত্রা চা উৎপাদনের মূল চালিকা শক্তি । মূলত মার্চের শুরু অথবা শেষ দিকে এসে প্রতি বছর শীতের রুক্ষতা ও শুষ্কতা কাটিয়ে বৃষ্টিপাত চা শিল্পের জন্য আর্শীবাদ হয়ে দেখা দেয়। কিন্তু চলতি বছর (২০২৪ সাল) চা উৎপাদনের শুরুতেই বৃষ্টি না থাকায় দেশের চা শিল্প প্রচন্ড খরতাপের মুখে পড়ে। পরবর্তী মে ও জুন মাসে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু বৃষ্টিপাত হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এতে চা উৎপাদনে ভাটা পড়েছে বলে জানিয়েছেন জেমস ফিনলে টি কোম্পানীর জিএম গোলাম মোহাম্মদ শিবলী। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, চা বাগানের মুল চালিকা শক্তি লক্ষ লক্ষ শ্রমিক। তাদের সিংহভাগই নারী। ফলে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে তারা চা পাতা তুলে থাকেন। তবে বরাবরই তাদের জীবন যাপন অবহেলিত থেকে যায়। তারপরও উৎপাদন ভালো হলেও তাদের মূখে হাসি ফুঁটে। আবার উৎপাদন ভালো না হলেও তাদের জীবন জীবিকায় টানা পোড়েন দেয়। ফলে এবছর উৎপাদন কম হওয়ায় শ্রমিকেরাও হতাশ। অকশন বিডার ও চা ব্যবসায়ী পিযুষ কান্তি দত্ত জানান, চা উৎপাদন মৌসুমের আরও দুই আড়াই মাস বাকি থাকলেও পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে এবছর চা বোর্ড এর নির্ধারিত লক্ষ্য মাত্রা পুরণের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছেনা। সেই সাথে চায়ের গুণগত মান বিনষ্ট হয়ে যাওয়াতে চা বাগান মালিকরা নিলামে চায়ের সঠিক দাম পাচ্ছেন না। আর যারা চয়ের মান ধরে রাখতে পারছেন, তাদের চা বাজারে ৩২০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে। আর লক্ষমাত্রা অর্জন না হলে বাজারে সকল চায়ের মূল্য বেড়ে যাবে। মহসিন টি হোল্ডিং এর চেয়ারম্যান মো. মহসিন মিয়া মধু বলেন, নিলামে চায়ের ভালো মূল্য পাওয়া যায়না। অথছ চায়ের উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ থাকায় নানা ভাবে বাগান মালিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এদিকে শ্রীমঙ্গলে চায়ের দ্বিতীয় নিলাম বাজারেও চায়ের দাম আশানুরুপ না হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও হতাশ। এদিকে বাংলাদেশ চা বোর্ড এর দেয়া তথ্য মতে, চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৮০ লাখ কেজি । কিন্তু বৈরি আবহাওয়া, দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশসহ নানা কারনে লক্ষ্যমাত্রায় পৌছা কোন অবস্তায় সম্ভব নয়। অপরদিকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত নানা বৈরী ও প্রতিকুলতার পরও এ পর্যন্ত ৪ কোটি ৯৫ লাখ ৩০ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। অথচ গেলো বছর (২০২৩সাল) এ সময়ে চায়ের উৎপাদন ছিলো ৫ কোটি ৪৭ লাখ কেজি। এবছর এখন পর্যন্ত গত বছরের চেয়ে ৫১ লাখ ৭০ হাজার কেজি চা পাতা কম উৎপাদন হয়েছে। গত বছর (২০২৩) চায়ের উৎপাদন হয়েছে ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি। লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৯ লাখ কেজি চা পাতা বেশি উৎপাদন হয়েছে।
চায়ের উৎপাদন কম হওয়াতে শ্রমিক-মালিক হতাশ, লক্ষ্যমাত্রা পূরন নিয়ে সংশয়
শেয়ার করুন