স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ
“বারো মাসে তের পার্বন” কথাটি বাঙ্গালির পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে। দুর্গাপূজার পর হিন্দুদের বৃহত্তম উৎসব”শ্রীশ্রী শ্যামা পূজা”।আর শ্যামাপূজা পূজার আগের রাতে পালিত হয় ” দীপাবলি উৎসব।” ভারতীয় উপমহাদেশেসহ বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে এই দিপাবলি/দিওয়ালি উৎসব মহা ধুমধামের সহিত পালিত হয়। দিপাবলি হিন্দুদের একটি উল্লেখযোগ্য উৎসব। যা ধনতেরাস থেকে শুরু করে ভাইয়া দুজ পর্যন্ত পাঁচ দিনের দীর্ঘ উৎসবকে ঘিরে রেখেছে।এ উৎসব সমগ্র ভারত, নেপালের কিছু অংশ এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন অংশে উদযাপন করা হয়। দীপাবলী শব্দের অর্থ প্রদীপের মালা। যার কারণে দীপাবলিকে আলোর উৎসব হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। দেওয়ালি অন্ধকার থেকে আলোর বিজয়ের ইঙ্গিত দেয়। খারাপ থেকে ভালোর জয় চিত্রিত করে।
বাংলাদেশ ও ভারতের হিন্দু ধর্মাবলম্বী,জৈন, শিখ এবং নেয়ার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অ-হিন্দু সম্প্রদায়ও এই গৌরবময় উৎসব পালন করেন। জৈনরা ভগবান মহাবীর দ্বারা প্রাপ্ত আধ্যাত্মিক জাগরণ বা নির্ভানা লাভের উদ্দেশ্যে এই উদযাপন করেন। শিখরা মুন্ডি সাম্রাজ্যের নৃশংস কারাগারের শৃঙ্খলা ছিন্ন ও ষষ্ঠ শিখ গুরু, গুরু হরগোবিন্দ সিং ব্রিটিশদের থেকে নিজেকে মুক্ত করেছিলেন এই দিনে তাই মুক্তির মুহূর্তকে আনন্দময় করার জন্য এই উৎসব পালন করেন।
হিন্দুধর্মের প্রতিটি উৎসবের সাথে যুক্ত থাকে প্রচুর কিংবদন্তি এবং দীপাবলির ক্ষেত্রেও রয়েছে। দুটি প্রধান কিংবদন্তী বেশিরভাগ লোক অনুসরণ করে যা একে অপরের পরিপন্থী।
কার্ত্তিকের অমাবস্যা-তে ভগবান রাম রাবণকে পরাজিত করেন এবং তাঁর নির্বাসনের ১৪ বছর পূর্ণ করে স্বরাজ্য অযোধ্যাতে ফিরে আসেন। অযোধ্যার লোকেরা প্রিয় রাজপুত্রের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে মাটির প্রদীপ এবং মোমবাতি দিয়ে আলোকিত করে উদযাপন করেছিলেন।
অন্য কাহিনী অনুসারে দৈত্য রাজা নারকাসুর ভগবান ইন্দ্রের মায়ের শ্রদ্ধা-এর কানের দুল চুরি করেছিলেন এবং ১৬০০০ জন মহিলাকে অপহরণ করে মন্দিরে অাটকে রেখে ছিলেন।নরকাসুরের অত্যাধিক শক্তি ও অপকর্মের কারনে আতঙ্কিত হয়ে দেবতাগণ, সাধুগণ সহ ভগবান বিষ্ণুর নিকটে পরিত্রান লাভের আবেদন করেছিলেন। ভগবান কৃষ্ণ হিসাবে অবতীর্ণ হয়ে তিনি কার্তিকের চতুর্দশীতে নরকাসুরকে শিরশ্ছেদ করেছিলেন এবং কানের দুলটিসহ মন্দির আটকে রাখা মহিলাদের উদ্ধার করেছিলেন। এভাবে নারকাসুরের যন্ত্রণাদায়ক রাজত্বের অবসান ঘটে এবং দিনটিকে নরক চতুর্দশী হিসাবে অমর করে তোলেন। লোকেরা পরের দিন ঈশ্বরের মহিমান্বিততা প্রকাশের জন্য প্রদীপ জ্বালিয়ে বিজয় উদযাপন করে, যা দিওয়ালি বা দিপাবলির উৎসব হিসেবে প্রচলিত।
চলতি বছর ৩১ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত দীপাবলির শুভ সময় থাকবে। কারণ এই সময় থাকবে অমাবস্যা। অমাবস্যা লাগবে বিকেল ৩টে ৫২ মিনিটে। আর ছাড়বে ১ নভেম্বর সন্ধ্যে ৬টা ১৬ মিনিটে। অর্থাৎ আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ দিপাবলী উৎসব। প্রতি বছর কালি পুজার আগের দিন ভূত চর্তুদশীর পূণ্য তিথিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের প্রয়াত স্বজনদের সমাধিতে প্রদীপ জ্বেলে, চন্ডি পাঠ করে এবং তাদের পছন্দের খাবার প্রদর্শন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রয়াত স্বজনদের উদ্দেশ্যে প্রার্থনার অনুষ্ঠান পরিণত হয় উৎসবে।
দিপাবলীর উৎসবে ব্যবহৃত প্রদীপের ভাতি যেমন নিজে পুড়ে জ্বলে শেষ হয়ে অন্যের জীবনকে আলোকিত করে তেমনি আমাদের সবার হৃদয় বাতি প্রজ্জ্বলিত হোক। সকল দুঃখ কষ্ট, করোনার মতো জরাব্যাধি, হিংসা-বিদ্বেষ জ্বলে পুড়ে শেষ হোক। সবার হৃদয় প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত হোক, মানুষে মানুষে ভ্রাতৃবোধ জেগে উঠুক, সাম্প্রদায়িকতার মত মহামারি পৃথিবী থেকে নিঃশেষ হয়ে দিপাবলীর উৎসব যেন পরিপূর্ণতা পায় এটাই হোক সকল মানুষের প্রত্যয়।