»সারা দেশ»৩৫ বছর ধরে পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করছেন চরফ্যাশনের মান্নান
৩৫ বছর ধরে পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করছেন চরফ্যাশনের মান্নান
জালালাবাদ বার্তা ডট কম ।
প্রকাশিতকাল:
চরফ্যাসন (ভোলা) প্রতিনিধি:
চরফ্যাসন উপজেলার চুনপট্টি রোডের মালতিয়া প্লাজার গলিতে বসে পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করেন আবদুল মান্নান মিয়া (৫৩)। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাল পিঁপড়ার ডিম, ভিমরুলের চাক ও বল্লার ডিম বা টোপ বিক্রি করেন তিনি। আরো রয়েছে মাছকে আকর্ষিত করার সুগন্ধি চাড় এবং ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের বড়শি ও ছিপ। সারাদিন লাল পিঁপড়া কামড়ালেও তা সহ্য হয়ে গেছে মান্নান মিয়ার।
মাছ শিকারিরা পিঁপড়ার ডিম ও চাড় কেনার জন্য ছুটে আসেন তার ছোট দোকানে। মাছ শিকারিরা চাহিদামতো পিঁপড়ার ডিম ক্রয় করে নিয়ে যান। মান্নান জানান, প্রায় ৩৫ বছর ধরে পিঁপড়ার ডিম বা লাসা ও বল্লার টোপ এবং বড়শি বিক্রির পেশা তার।
আবদুল মান্নান পৌরসভা ৫নং ওয়ার্ডে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ১৯৮৯ সাল থেকে তিনি লাল পিঁপড়ার ডিম বড়শি এবং বড়শির নানান সরঞ্জাম বিক্রি করে পরিবারের ব্যয় বহন করেন। গতকাল সকালে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, ভোলার আঞ্চলিক ভাষায় এই লাল পিঁপড়াকে ‘লায়া’ বলা হয় এবং ডিমগুলোকে ‘লাসা’ অথবা লায়ার ডিম বলা হয়। লিচু, মেহগনি ও আম গাছসহ বিভিন্ন ঝোপঝাড়ে বাসা করে পিঁপড়ার দল। অনেকগুলো সবুজ পাতাকে একত্রিত কবে গোলাকৃতির ছোট-বড় বাসা বাঁধে এবং সেখানে ডিম দেয়। তবে সব বাসায় লাল পিঁপড়ার ডিম বা লায়া পাওয়া যায় না। এই লায়া পিঁপড়ার বাসায় মেলে প্রচুর সাদা ডিম বা লাসা। এই পিঁপড়ার ডিম ও বড়শি মান্নান মিয়ার আয়ের একমাত্র মাধ্যম। লাল পিঁপড়ার বড় বাসায় ১৫০-২০০ গ্রাম পর্যন্ত ডিম পাওয়া যায়। খুব সতর্কভাবে এই ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হয়। ডিমগুলো মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং মাছেরও খুব প্রিয় খাদ্য এ ডিম। লাল পিঁপড়ার ডিম মে মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত অনেক বেশি পাওয়া যায়।
ডিম সংগ্রহের বিষয়ে মান্নান মিয়া বলেন, একটা লম্বা বাঁশের মাথায় ঝুড়ি বাঁধা হয় যেটাকে আঞ্চলিক ভাষায় লগি বলে। গ্রাম এলাকায় ঝোপঝাড়ে গিয়ে পিঁপড়ার বাসা খুঁজে এই লগির (বাঁশ) সূচালো মাথা দিয়ে পিঁপড়ার বাসা ভাঙি। এ সময় লগির মাথায় লাগানো ঝুড়িতে ডিমগুলো পড়ে।
এ ছাড়াও আলমগীর ও জসিম নামের দুইজন পিঁপড়ার ডিম সংগ্রাহক রয়েছেন। তাদের থেকেও ৬০০ টাকায় প্রতি কেজি পিঁপড়ার ডিম কেনেন এবং ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এই ব্যবসার আয় দিয়েই তিনি পাকা বাড়ি করেছেন এবং ৫২ শতাংশের মতো জমি কিনেছেন, সন্তানদের পড়ালেখা করাচ্ছেন। তার স্ত্রী ও দুই ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে সংসার। প্রতিদিন ২- ৩ কেজি পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করেন বলে জানান মান্নান মিয়া। আগে তিনি মুদি ব্যবসা করলেও শখ থেকে বড়শি দিয়ে মাছ ধরা ও এক পর্যায়ে এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। মৌসুমে প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা আয় করেন লাসা ও বড়শি সরঞ্জাম বিক্রি করে।
ডিম কিনতে আসা শফিক হাওলাদার বলেন, পিঁপড়ার ডিম দিয়ে মাছ শিকারের টোপ দিলে বড়শিতে মাছ বেশি ধরা পড়ে। তাই কিছুদিন পর পর পিঁপড়ার ডিম ও ময়ূর পেখমের সুমা, হুইল, সুতা চাড়, মাছ রাখার জালিসহ অনেক কিছুই এখান থেকে কিনে নিয়ে যান তিনি।
পাশের উপজেলা থেকে আসা মাসুম বিল্লাহ বলেন, প্রতি মাসেই তিনি চরফ্যাসনের তেঁতুলিয়া ও মায়া নদীতে বড়শি ফেলতে আসেন। মান্নান ভাইয়ের কাছ থেকে বড়শি বাঁধিয়ে নিই এবং পিঁপড়ার ডিম দিয়ে মাছ ধরি। ভালো মাছ পাওয়া যায়।