শ্রীমঙ্গলে টমটম পার্কিং নিয়ে দুইপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৩৯, আটক ১৪


মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে টমটম পার্কিং নিয়ে দু’পক্ষে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৫৬ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ তীব্র হতে থাকলে সেনাবাহিনী এসে নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় পথচারিসহ দুই পক্ষের ৩৯জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসময় ১২/১৩টি টমটম ও একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে সারা শহরে আকঙ্কের সৃষ্টি দোকানপাট ও মার্কেট বন্ধ হয়ে যায়। ঈদের মার্কেট করতে আসা সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন।

জানা যায়, রোববার (৩১ মার্র্চ) রাত ১১ টার দিকে শ্রীমঙ্গল পৌর এলাকার হবিগঞ্জ রোডের গদারবাজারে টমটম পার্কিং নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সৃত্রপাত হয়। পরে শহরতলীর উত্তর ভাড়াউড়া গ্রামের বাসিন্দারা লাটিসোঁটা নিয়ে শহরে হবিগঞ্জ সড়কে অবস্থান নেয়। ওপর দিকে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপি নেতা মহসিন মিয়া মধু সমর্থিত একটি গ্রæপ শহরের স্টেশন সড়কে অবস্থান নিলে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ঈদ মার্কেটে আসা সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে শহর ছাড়তে থাকেন। এক পর্যায়ে রাত দুইটার দিকে দুটি পক্ষ মুখামোখি সংঘর্ষে লিপ্ত হলে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। এতে পরিস্তিতি শান্ত না হলে রাত আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর একটি টিম এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শহরের হবিগঞ্জ সড়কে গদার বাজার নামক স্থানের সরকারী একটি খাস জমিতে মাস দুয়েক আগে সাবেক পৌর মেয়র মহসিন মিয়ার উদ্যোগে উর্দ্বগতির বাজার নিয়ন্ত্রণে একটি বিনালাভের নিত্যপণ্যের দোকান বসানো হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া মধু তার বিনালাভের বাজার পরিদর্শনে আসেন। এসময় বিনালাভের বাজারের সামনে টমটম পার্কিং করা দেখে মধু মিয়া টমটম চালকদের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এসময় সদর ইউনিয়ন সাবেক সদস্য আনার মিয়া বিষয়টি নিয়ে মহসিন মিয়ার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে ইউপি সদস্য আনারের সাথে মধু মিয়া ও তার লোকজনের বাকবিন্ডা হয়।

এঘটনার সুত্র ধরে সাবেক মেয়র মহসিন মিয়ার পক্ষের লোকজন সাগর নামে এক পরিবহন শ্রমিক নেতার একটি প্রাইভেট কার এবং ১০/১২টি টমটম ভাঙচুর করে।

টমটম ভাঙচুর ও চালকদের উপর হামলার খবর চালকদের গ্রামে পৌঁছালে বিষয়টি মসজিদের মাইকে ঘোষনা দেওয়া হয়।
পরে পশ্চিমভাড়াউড়া গ্রামের কয়েকশ মানুষ লাপিসোঁটা নিয়ে শহরে প্রবেশ করে। এসময় তারা সাবেক মেয়র মহসিন মিয়ার বাড়িতে হামলার জন্য যেতে চাইলে শহরের চৌমুহনাতে পুলিশ অবস্থান নিয়ে ফাঁকা গুলি ও রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে।

অপর দিকে মেয়রের লোকজনও শহরের স্টেশন রোড থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।

এক পর্যায়ে পুলিশ সরে গেলে উভয় পক্ষ মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে উভয় পক্ষে ৩৯ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এসময় উপজেলার সবুজবাগ এলাকার জয় চৌধুরী নামে একজন পথচারী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে রাতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ সংঘর্ষ রাত ২ টা পর্যন্ত চলে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকে খবর দিলে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেআনে। এসময় দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া মধুসহ ১৩জনকে আটক করে শ্রীমঙ্গল থানায় হস্তাস্তর করেন সেনা সদস্যরা।

এছাড়াও ওপর পক্ষের পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে আনার মেম্বারের ছেলেকে আটক করে নিয়ে আসে। এব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানা অফিসার ইচার্জ (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ১৪জনকে থানায় হস্তান্তর করেছে সেনাবাহিনী।

আটককৃতদের সোমবার বিকেলে মৌলভীবাজার জেলা বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ইসলাম উদ্দিন জানান, টমটম চালক, গ্রামবাসী ও সাবেক মেয়রের লোকজনের মধ্যে যে সংঘর্ষ এটা সময়মতো নিয়ন্ত্রণ না হলে বহু মানুষ হতাহতের সম্ভবনা ছিল।

শেয়ার করুন