শেখ শাহরিয়ার জামান
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের। এজন্য তারা নিয়মিত বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। দেশটি সরকারের কাছে রাজনীতি সম্পর্কে যেমন জানতে চায়, তেমনই আবার বিরোধীদের মনোভাবও তারা বুঝতে চায়। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রাজনৈতিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সোমবার (৩০ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট তার বাসায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির কয়েকজন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর আগে হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা লিসা কার্টিস বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই আগ্রহ এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ জমির, যিনি মার্শা বার্নিকাটের বাসায় ওইদিন উপস্থিত ছিলেন, বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সবসময় বলেছি, যুক্তরাষ্ট্র যদি আমাদের সহায়তা করতে এগিয়ে আসে, তবে আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।’
তিনি বলেন, ‘সার্বিকভাবে সুশাসনের জন্য দুটি জিনিস দরকার। সেগুলো হচ্ছে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবসময় সহায়তা করেছে।’
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যে সহায়তা করে, তার প্রশ্ন করার অধিকার আছে। প্রশ্ন করলে জবাবদিহি থাকে। আমরা প্রশ্নের উত্তর দিতে ভয় পাই না।’ মোহাম্মাদ জমির বলেন, ‘আমরা চাই, বহির্বিশ্বে যারা আছেন, তারা বুঝুক বাংলাদেশের জনগণ সবাই একত্রে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছেন।’
সাধারণভাবে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা কী বিষয়ে আলোচনা করেন, জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এখন বৈশ্বিকভাবে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয় শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বিষয়টিকে। আবার এদের মধ্যে অগ্রাধিকার পায় স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা।’
বাংলাদেশ সরকারের কাছে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র জানতে চায়। আবার বিরোধীদের মনোভাবও তারা বুঝতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘তারা নিশ্চিত হতে চায় আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ হবে কিনা। আবার বিরোধীদের কাছে জানতে চায়, তারা অংশগ্রহণ করবে কিনা এবং তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে কিনা।’
এছাড়া, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগ্রহ বাড়ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, এমনকি চীনসহ বিভিন্ন দেশ অবাধ, সুষ্ঠু, বিরোধহীন সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে জনসমক্ষে মন্তব্য করার পাশাপাশি তারা দেশের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে প্রাইভেট বৈঠকও করছেন।
প্রসঙ্গত, সোমবার (৩০ এপ্রিল) রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের বাসায় বৈঠকে অংশ নেয়।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, নৈশভোজ শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে মার্শা বার্নিকাটের পাঁচ মিনিট একান্ত বৈঠক হয়। বৈঠকে ওবায়দুল কাদের ছাড়াও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য অ্যাম্বাসেডর মো. জমির, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, ফারুক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল ও যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স সেকেন্ড সেক্রেটারি কাজী রহমান দস্তগীর ও জ্যাকব জে লেভিনসহ দূতাবাসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাই/২০১৮ বাংলাদেশ সময়-১৪.০০/