সাইফুল ইসলাম,
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে রাবার বাগানের মাঝেমধ্যে প্রকৃতির বুকে হারিয়ে যেতে আমাদের সবারই ইচ্ছা করে! প্রকৃতির কাছাকাছি এলেই মন এক ধরনের প্রশান্তিতে ভরে যায়। প্রকৃতি মানুষকে বিন¤্র হতে শিক্ষা দেয়। শহরে যান্ত্রিক জীবনের ফাঁকে একটু সময়ের জন্য অথবা ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন প্রকৃতির এক অপরূপ নিবিড় মেলবন্ধন থেকে।
সুউচ্চ বৃক্ষের সারি। ঠিক যেন স্কেল দিয়ে মেপে মেপে একই সমান্তরালে লাগানো গাছগুলো। যতদূর চোখ যায় শুধু গাছ আর গাছ। গাছগুলোর নাম রাবার গাছ। দেখলেই মন ভরে যায়।
শ্রীমঙ্গল জেমস ফিনলে টি কোম্পানির রাবার বাগানের এই সৌন্দর্য অকৃত্রিম। কোন কোন জায়গায় দুই ধারে আবার কোন জায়গায় একধারে চা বাগান একধারে রাবার বাগানের হাজারো গাছ আর এরই মাঝখানে সুবিশাল পথ। যেমন লাউয়াছড়া যেতে রাস্তার বাম পাশে রাবারের সারি সারি গাছও ডানপাশে চা বাগান। আবার কালিঘাট রোডস্থ ফুলছড়া বাগানে যেতে রাস্তার দু,পাশে হাজার হাজার রাবার বাগানের গাছ।
বাগানটির অন্যতম সৌন্দর্য হলো এটি একেক ঋতুতে একেক রকম সাজে সজ্জিত হয়। শীতকালে গাছের সব পাতা ঝরে গিয়ে যেমন রিক্ত হয়, তেমনি বর্ষায় ফিরে পায় নতুন যৌবন।
বিটিআরআই চা বাগানের এলাকায় রাবার বাগানের পাশেই রয়েছে টি রিসোর্ট গেস্টহাউস। চারদিকে নানা রঙের ফুলের গাছ, তারই মাঝে বাংলো ভবন।
রঙিন চালের ছাউনিতে গেস্টহাউসটি যেন প্রকৃতিরই একটা অংশ। বৃষ্টির দিনে মেলে বৃষ্টি বিলাসের সুযোগ। এমন বর্ষার দিনে এক কাপ চা খেতে খেতে বৃষ্টি দেখার মজাই আলাদা।
বাগানের প্রতিটি গাছের পাতা থেকে বৃষ্টি ঝরে পড়ার অপরূপ দৃশ্য আর টিনের গায়ে বৃষ্টি পড়ার শব্দ মিলে যেন ভিন্নধর্মী এক অনুভূতির সৃষ্টি করে। আর চা বাগানে রাতে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। এ সময় ভিন্ন রূপে সাজে বাগানের অপরূপ দৃশ্য।
চা বাগানের ভেতরে সুবিশাল কারখানা, যেখানে রাবারশিট তৈরি করা হয়। সকালে দুধের মতো সাদা কাঁচা রাবার সংগ্রহ করে জমা করে রাখা হয় বড় বড় হাউসে। সেখান থেকে নানা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও মেশিনের ব্যবহারের মাধ্যমে তৈরি করা হয় রাবারশিট। এই রাবারশিট শুকানো ও আগুনে তাপ দিয়ে লালচে ভাব না হওয়া পর্যন্ত তাপ দেওয়া হয়। প্রক্রিয়াগুলো সত্যিই অসাধারণ।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা মহাখালী থেকে সরাসরি এনা বাস রয়েছে। ভাড়া বাসভেদে ৬০০-৩৮০ টাকা। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে সিলেটগামী আন্তনগর উপবন ট্রেন, আন্ত:নগর কালনী ট্রেন ও আন্ত:নগর পারাবত ট্রেন। যেখানে থাকবেন রাবার বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য কিছুদিন থাকতে চাইলে ছোট ছোট কটেজ রয়েছে। ভাড়া কক্ষভেদে ১০০০-১৫০০ টাকা। তবে বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে জেরিন চা বাগানের বাংলোতে থাকার সুযোগ রয়েছে। সাতগাঁও চা বাগানেও থাকার ব্যবস্থা আছে। আবার লাউয়াছড়া সংলগ্ন লাউয়াছড়া ইকো কটেজে কম রেইটে রাত্রি যাপন করতে পারবেন। যোগাযোগ করতে পারেন লাউয়াছড়া ট্যুর গাইড মি: রিজভী মুঠোফোন ০১৭৮২২০৮৪৬১।’