মৌলভীবাজারে পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীদের হতাশা

  • সাইফুল ইসলাম,

  • মৌলভীবাজারের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ঈদুল আজহার ছুটিতেও পর্যটকদের তেমন ভিড় নেই। দূর-দূরান্তের পর্যটক-দর্শনার্থীদের তুলনায় জেলার পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজনের উপস্থিতি ছিল বেশি। তবে ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার (২৫ আগস্ট) পর্যন্ত পর্যটক সমাগম মোটামুটি বেড়েছে বলে জানিয়েছে পর্যটন পুলিশ। তবে তা আশানুরূপ নয়।মৌলভীবাজার জেলার পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বর্ষিজোড়া ইকো পার্ক, মাধবপুর লেক, হাম হাম জলপ্রপাত, খাসিয়া পল্লী, মাধবকুণ্ড, বাইক্কা বিল হাইল হাওর, হাকালুকি হাওর, মণিপুরী পল্লী, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, চা বাগান, আনারস-লেবু বাগান ও চা গবেষণা কেন্দ্র, বধ্যভূমি-৭১, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন ও শমশের নগর ক্যামেলিয়া লেক। এসবের অধিকাংশই শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত।

  • ঈদের দিন বিকালে লাউয়াছড়া উদ্যানে শ’তিনেক মানুষ ঘোরাফেরা করেছেন। অনেকে আবার পরিবারের ছোটবড় সবাইকে নিয়ে মাধবপুর লেক, খাসিয়া পল্লী ও বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধে ঘুরতে গেছেন। তাদের বেশিরভাগই মৌলভীবাজার, সিলেট ও হবিগঞ্জ জেলার বাসিন্দা।লেমন গার্ডেন রিসোর্টে অতিথিরাএদিকে মৌলভীবাজার জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩০০টির মতো আবাসিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। এখানকার ৫-৬টি রিসোর্টে পুল বুকিং ছাড়া অধিকাংশ হোটেলের ৪০ শতাংশ পূর্ণ হয়েছে বলে জানা যায়।লাউয়াছড়া ইকো কটেজের ব্যবস্থাপক তুহেল আহমদ বলেছেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের জন্য প্রতিটি হোটেলই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। কিন্তু এসব হোটেলের মাত্র ৪০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। তাও শুধু শুক্র ও শনিবারের জন্য। অথচ গত বছর এ সময় প্রায় ৮০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছিল।’শ্রীমঙ্গল স্মার্ট ট্যুরিজমের পরিচালক এম এ রকিব বললেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের ঈদে তেমন একটা পর্যটক সমাগম ঘটেনি। তবে ঈদের ছুটিতে লাউয়াছড়া বেড়াতে আসা বেশিরভাগ দর্শনার্থী ঘুরেফিরে সন্ধ্যার পর গন্তব্যে ফিরে গেছেন। এ কারণে আবাসিক হোটেল-মোটেলগুলো বোর্ডার শূন্য ছিল বলা চলে।’লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে প্রত্যাশিত পর্যটকের দেখা না পাওয়ায় মৌলভীবাজার আবাসিক হোটেলসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীরা এর কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম মৌলভীবাজারে সাম্প্রতিক বন্যায় সড়কের ভাঙন, এলাকাভিত্তিক ঘুরে বেড়ানোর জন্য অভ্যন্তরীণ সড়ক ব্যবস্থাপনা না থাকা, হোটেল-মোটেলে ভাড়ার হার বেশি প্রভৃতি।

  • লাউয়াছড়া সড়ক ও মাধবকুণ্ড সড়কের বেহাল দশা বলে জানালেন ঢাকা থেকে আসা বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা সঞ্জয় চক্রবর্তী ও তার স্ত্রী প্রিয়াংকা ভট্টাচার্য। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে তাদেরকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তারা বলছেন, ‘১০ বছর আগে লাউয়াছড়া এসেছিলাম। তখন প্রচুর পশু-পাখি দেখা যেতো। কিন্তু ১০ বছর পর এসে একটি মাত্র বানরের দেখা পেলাম। এত পশু-পাখি গেলো কোথায়!’লাউয়াছড়া উদ্যানের সামনে বসা দোকানি জায়েদ আলী বলেন, ‘গত বছর কোরবানির ঈদের ছুটিতে ছোট দোকানিরা দৈনিক ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা ও বড় দোকানদারদের আরও বেশি বিক্রি হয়েছিল। সব ব্যবসায়ী গত বছর ভালো মুনাফা করেছেন। এবার পর্যটক কম হওয়ার কারণে বিক্রি কম হয়েছে। টুকটাক যা বিক্রি হয়েছে তা বলার মতো নয়।’লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ফটকরাস্তাঘাট ভাঙাচোরার কারণে দুর্ভোগ পোহানোর কথা উল্লেখ করলেন শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসা ঢাকার গাজীপুর ১১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কালাম আহমদ ও একটি দৈনিকের বিপণন ব্যবস্থাপক মো. ফজলুল হক। তবে লাউয়াছড়া ও মাধবপুর লেক, বিটিআরআই এলাকার চা বাগান দেখে ভালো লেগেছে তাদের। তারা বলেন, ‘সবচেয়ে উপভোগ্য ছিল ডুলুবাড়ি এলাকার লেমন গার্ডেন রিসোর্ট।’

  • লাউয়াছড়ার কাছে ব্যক্তি মালিকানাধীন রিসোর্ট লেমন গার্ডেনের চেয়ারম্যান মো.সেলিম মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এখানে ঈদের তৃতীয় দিন ৮০০ জন অতিথি এসেছে। রিসোর্টে প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৩০০ টাকা। সুইমিং পুলে গোসলের জন্য ২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে জনপ্রতি। এছাড়া পর্যটকদের জন্য রয়েছে স্পা সেন্টার।মৌলভীবাজার পর্যটন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. নবাব আলী বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সবসময় নিয়োজিত আছি। শুক্রবার পর্যন্ত লাউয়াছড়া উদ্যানে টিকিট বিক্রি হয়েছে ৯৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে ঈদের দিন পর্যটক ছিল ৩০০ জন।’লাউয়াছড়া সড়কে খানাখন্দতুলনামূলক পর্যটক উপস্থিতি কম থাকার কারণ হিসেবে পুলিশের এই কর্মকর্তার মন্তব্য, ‘মৌলভীবাজারে যেসব হোটেল-মোটেল রয়েছে, সবটাতেই ভাড়ার হার বেশি।

  • এছাড়া রাস্তাঘাটে খানাখন্দ ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’এবার পর্যটক কম থাকার কারণ চিহ্নিত করে শ্রীমঙ্গল রাধানগর লাউয়াছড়া ইকো কটেজের মালিক রুমি বেগম বলেন, ‘গত বছর আবহাওয়া ভালো ছিল। তখন ছুটিও বেশি ছিল। এবার মাত্র দুই দিন বন্ধ। রবিবার থেকে আবার সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলছে। এছাড়া এবার প্রবল বর্ষণ ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে দর্শনার্থী-পর্যটকের সংখ্যা কম।’

  • লাউয়াছড়া টিকিট কাউন্টারমৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাশেদুল হক বলেন, ‘আশা করছি, অতি দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সম্প্রতি বন্যায় রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে পর্যটক বা সাধারণ যানচলাচল বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতো দুরবস্থা কিন্তু নেই।’

শেয়ার করুন