আমার আপন কোনও ভাই নাই, তাতে কি? অনেকেই আমাকে ভাই বলে ডাকে, ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ ভালবাসা দেয় আবার বড় ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা এবং সম্মানও করে। তবে আমি যে ছোট ভাইটির কথা বলছি ও কিন্তু সকলের চাইতে একটু আলাদা, ও যখন একটু আধটু কথা বলা শিখেছে তখন থেকেই বলতো “আমরা দুই ভাই, রুহুল ভাই আর আমি”। আমাকে সবসময় সেই “ভাইয়া”বলেই ডাকতো। এখন আমার ভাইটি আমার থেকে ১১-১২ হাজার আকাশ পথ দূরত্বে।
শাহরিয়ার, পুরো নাম গাজী তৌফিক আহমদ (শাহরিয়ার)। জ্বি ঠিকই বলছি, ফয়েজ স্যার আর তহমিনা খালার বড় ছেলে সে। মুল বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং এ হলেও শাহরিয়ারের জন্ম থেকে বেড়ে উঠা সিলেটেই, হ্যাঁ আমাদের গ্রামের বাড়ি কানিহাটি কিংবা হাজীপুরে।
ছোট বেলায় কি দুরন্তই না ছিল এই ছেলেটি। আমার বন্ধু মিজান তখন সিএনজি অটোরিক্সা চালাইতো (এখনও চালায়)। মিজান যখন ওর সিএনজি নিয়ে আমাদের বাড়ির কাউকে নিতে বা দিতে আসতো শাহরিয়ার ওই ৪/৫ বছর বয়সেই লুকিয়ে লুকিয়ে সিএনজি চালানোর চেস্টা করতো সেই নিয়ে মিজানের সংগে শুরু হত ঝগড়া, মিজান কিন্তু ওকে খুবই আদর করতো। এখনও আমার চোঁখের সামনে ভেসে উঠে সেই ঝগড়ার দৃশ্য। আমার কানের কাছে আজও বাজে শাহরিয়ার তার মা বাবাকে বলছে “আমি বড় অইয়া সিএনজির ড্রাইভার অইমু”।
কালকে যখন শুনলাম আমার আদরের এই ছোট ভাইটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে আনন্দে আমার চোঁখে পানি চলে আসে। মনে পড়ে, আমরা যখন কানাডাতে চলে আসি ও তখন খুবই ছোট, কাঁদো কাঁদো গলায় বলেছিল, “তোমরা একবারে যাইরায়গিনি? আর আইতায় নায়?”
আমি আগেই জানতাম আমার ভাইটি এরকমই কিছু একটা রেজাল্ট করবে। ওর বাবা, আমাদের ফয়েজ স্যার, যার কাছে আমরা অনেক ঋণী, এই স্যার না থাকলে হয়তো এসএসসিতে আমি পাশই করতাম না কিংবা কোনও রকমে পাশ করতাম। আমি যখন ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ি স্যারের সাথে তখন থেকেই আমাদের সম্পর্ক, সম্পর্কটা অনেকাংশে পারিবরিক সম্পর্কের চেয়েও গভীর। লিখা পড়ার জন্য স্যারের কাছ থেকে যা পেয়েছি তা বলে শেষ করার মতো নয়। সেই স্যারের ছেলে ভালো রেজাল্ট করবে, সরকারী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবে সেটাই স্বাভাবিক। তহমিনা খালাও একজন শিক্ষিকা, কানিহাটি হাই স্কুলের সিনেয়র শিক্ষিকা তিঁনি, আর ফয়েজ স্যারতো বর্তমানে পতনঊষার কলেজিয়েট স্কুলের প্রিন্সিপাল।
গর্বিত মা বাবার গর্বিত সন্তান আমাদের এই শাহরিয়ার। অনেক অনেক ভালোবাসী তোকে, ডাক্তার হয়ে জনগনের সেবা কর ভাই, মানুষের জন্য ডাক্তার হও, নিজের জন্য কসাই হয়ো না।
রুহুল কুদ্দুছ চৌধুরী, টরন্টো, কানাডা