মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, মালয়েশিয়া প্রতিনিধিঃ
জীবন-জীবিকার তাগিদে বাংলাদেশের মানুষেরা যখন প্রবাস নামক জেলখানার টিকেট নিয়ে প্রবাসে আসে তখন কতইনা স্বপ্ন মনের হৃদয়ে ছবি আঁকে তা বলাই বাহুল্য। এমন চিত্র অভিভাবকহীন মালয়েশিয়া আসা প্রবাসী বাংলাদেশীরা। সেখানে বাংলাদেশীদের বিপদে দূতাবাসের কর্মকর্তারা কখনো এগিয়ে আসে না। অথচ নেপালের মতো দেশের নাগরিকরা যখন এমন বিপদে আক্রান্ত হয়, রাষ্ট্রদূত পর্যন্ত ছুটে আসে। উন্নত ও অভাব অনটনমুক্ত জীবন-যাপনের জন্য অনেক বাংলাদেশি পাড়ি জমায় মালয়েশিয়ায় কিন্তু অবৈধ অভিবাসন ও দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে তাদের ঠিকানা হয় অন্ধকার জেলে। প্রবাসী ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মালয়েশিয়ার জেলখানায় একবেলা খাবার খেয়ে কোনোমতে দিনাতিপাত করেন বাংলাদেশী বন্দিরা।
মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও জেলে থাকতে হচ্ছে তাদের। কতো সংখ্যক বাংলাদেশী মালয়েশিয়ার জেলে রয়েছে, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে সেই সংখ্যা ৭০-৭৫ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের অভাবে মুক্তি মিলছে না তাদের। এছাড়া অবৈধ অভিবাসী হওয়ায় সরকার কিংবা কোনো সংস্থা এসব বন্দিদের নিয়ে কাজ করছে না। অনুসন্ধানে জানা যায়, দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সাগর পথে অবৈধ অভিবাসী হয়ে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেন অনেক বাংলাদেশী। আবার অনেকে ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে আর দেশে ফেরেন না, অনেকে স্টুডেন্ট ভিসায় মালয়েশিয়া গিয়ে কলেজে যান না, ফলে দেশটিতে প্রবেশের পরেই অবৈধ হয়ে যান তারা। ইমিগ্রেশন পুলিশের কড়া অভিযানে প্রতিনিয়ত গ্রেফতার হচ্ছে অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশীরা। ফলে গ্রেফতার হয়ে মালয়েশিয়ার জেলে জীবন পার করছেন বহু বাংলাদেশী।
প্রবাসী বাংলাদেশী বরগুনা জেলার মোঃ হানিফ মিয়া বলেন, তার এলাকার আবির নামে এক প্রবাসী গত ৬ মাস ধরে জেলে রয়েছেন। আবির দেশটির জহুরাবাদ এলাকার একটি কারখানায় কাজ করতেন। মাস ছয়েক আগে ইমিগ্রেশন পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হন তিনি। এরপর থেকেই তিনি কারাগারে বন্দি রয়েছেন। প্রবাসী বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র সানাউল্লাহ সানী বলেন, মালয়েশিয়ার জেলে বহু সংখ্যক বাংলাদেশী রয়েছে। এর কারণ হচ্ছে অবৈধ অভিবাসন। ইমিগ্রেশন পুলিশ অবৈধদের ধরতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে। অভিযানে বেশিরভাগই বাংলাদেশীরা আটক হয়। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার জেল পৃথিবীর অন্যতম বিপজ্জনক জেল। বাঙালিদের ধরার পর কাপড় খুলে নির্যাতন করে পুলিশ। জেলের খাবারের মেন্যু হচ্ছে শুটকি দিয়ে একবেলা ভাত আর সঙ্গে গরম পানি। সেখানকার জেলে বন্দিদের নিয়ে কোনো সংস্থাও কাজ করছে না। পুত্রাজায়ার প্রবাসী বাংলাদেশি আলী আহমদ বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী দূতাবাসে সেবা নিতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রবাসীরা জেলে পচে মরে গেলেও দূতাবাস খবর নেয় না। এজন্য মালয়েশিয়ার পুলিশও বাংলাদেশিদের হয়রানি করে। কুয়ালালামপুরের একটি ক্যাফের প্রধান শেফ মোঃ নাজমুল হোসাইন জানান, প্রতিনিয়ত অভিযানে প্রচুর অবৈধ বাংলাদেশী গ্রেফতার হচ্ছেন। সেই হিসাব অনুযায়ী জেলে বন্দির সংখ্যা নেহাত কম নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রায় ১০ লাখের অধিক বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় রয়েছেন। প্রতিদিন একভাগ লোক সমস্যায় পড়লে ১০ হাজার হয়।
আর ১০ হাজার লোকের সমস্যা সমাধান করতে ১৫ মিনিট করে ব্যয় হলে ১৫-২০ দিন সময় লাগে। অতএব অভিযোগ থাকতেই পারে। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে দূতাবাস অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।
নেপালের নাগরিকরা সমস্যায় পড়লে রাষ্ট্রদূতসহ টিম চলে যায়, কিন্তু বাংলাদেশিরা বিপদে পড়লে দূতাবাসের কোনো সহযোগিতা পান না প্রবাসীদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে শহিদুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন শহরে নেপালের অালাদা টিম রয়েছে, যেটা বাংলাদেশের নেই। জহুরবারুতে ঘটনা ঘটলে কুয়ালালামপুর থেকে টিম যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু নেপাল যেতে পারে কারণ বিভিন্ন শহরে দূতাবাসের অালাদা টিম রয়েছে। দূতাবাসে সেবা নিতে গেলে দুর্ব্যবহারের স্বীকার হন প্রবাসীরা এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাইকমিশনার বলেন, এ অভিযোগ পুরোপুরি সত্য নয়। কারণ ঢাকা থেকে ৩২ জনের টিম এসে শুধু পাসপোর্টের জন্য কাজ করছে। এটা কিন্তু অনেক বড় একটি বিষয়। তারপরও সমস্যা অভিযোগ থাকতেই পারে। জেলে বন্দিদের ব্যাপারে জানতে চাইলে শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন কোনো না কোনো অভিযানে আটক হচ্ছেন প্রবাসীরা। তবে সংখ্যা বলাটা কঠিন। শ্রম সচিবের নেতৃত্বে অালাদা কমিটি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।