সিপার আহমেদ (কুলাউড়া) মৌলভীবাজারঃ
শহরের প্রাচীনতম একটি প্রতিষ্ঠান।
অনেক পাঠক, লেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, ছাত্র-শিক্ষকের স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই বুকস্টলকে ঘিরে।
যাত্রা শুরু করেছিলো সেই ১৯৫৫ সালে। এখনও পথ চলছে পাঠকদেরকে নিয়েই। একটা সময়ে দৈনিক পত্রিকা পাবার একমাত্র ভরসাস্থলই ছিলো এই বুক স্টল।
জয়পাশা গ্রামের মোহাম্মদ আহম্মদ চৌধুরী, যিনি মতিন চৌধুরী নামেই পরিচিত ছিলেন। অত্যন্ত সজ্জন এবং জ্ঞানী লোক। তিনিই এ বুকস্টল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজ তিনি বেঁচে নেই! উনার জ্যেষ্ঠ ছেলে মহসিন চৌধুরী এখন এর পরিচালক।
আমার এখনও মনে পড়ে, তখন আন্তঃনগর ট্রেন ছিল না।যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল দূর্বল। আজকের মতো ঢাকা-কুলাউড়া সড়ক যোগাযোগও ছিল না। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা উল্কা এক্সপ্রেস ট্রেনে পত্রিকা আসতো। বিকেল হলেই আমরা পত্রিকা কেনার জন্য বুকস্টলে ভিড় করতাম। রাতে ছাপা হওয়া পত্রিকা আমরা পেতাম পরদিন বিকালে। তখনকার সময়ে পত্রিকায় দুটো তারিখ লেখা থাকতো। একটা ঢাকা, আরেকটা ছিল মফস্বল। ইত্তেফাক ছিল খুবই জনপ্রিয়। বাবা আমাকে পঞ্চাশ পয়সা দিতেন পত্রিকা কেনার জন্য। সে পয়সা দিয়ে পত্রিকা কিনে আনতাম।
চিত্রালী নামে সিনেমার একটা পত্রিকা ছিল। মাঝে মাঝে আমি সে পত্রিকাও নিয়ে আসতাম। সিনেমার নায়ক নায়িকার ছবিতে ভরপুর থাকতো চিত্রালী। আরেকটা ছিল পূর্বানী। বেগম নামে মহিলা পাঠকদেরও একটা পত্রিকা দেখেছি। আরও কিছু দৈনিক পত্রিকা থাকতো, দৈনিক বাংলা, আজাদ, সংবাদ। সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ছিল রোববার, বিচিত্রা। গল্পের বই তো ছিল’ই।
স্কুলে পড়ার সময় অনেক লোককে দেখতাম যারা বুকস্টলে বসে পত্রিকা, ম্যাগাজিন এগুলো পড়তেন। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা আজ প্রতিষ্ঠিত।
কাদিপুর গুপ্তগ্রামের মরহুম হিরা ভাই। দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দী বুকস্টলে ম্যানেজার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। খুব ভালো লোক ছিলেন তিনি। ছাত্রদেরকে বিনা পয়সায় পত্রিকা পড়তে দিতেন।
সময় বদলে গেছে, বদলে যাচ্ছে অনেক কিছুই। পত্র-পত্রিকায় লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। এ আধুনিকতার ভিড়েও আমাদের প্রিয় বুকস্টল তার অতীত ঐতিহ্য নিয়ে এই শহরে, এই রেলস্টেশনে,.. সরবে, সগর্বে আজো দাঁড়িয়ে আছে……আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতি আর চেতনার বাহক হয়ে।