ইলিয়াছ খান, টরন্টো, কানাডাঃ
সম্প্রতি ভারতের নয়া দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রতিবাদে “জয় হোক মানবতার” স্লোগান নিয়ে টরন্টোর অত্যন্ত জনপ্রিয় সামাজিক সংগঠন জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব টরন্টো, কানাডা আয়োজন করে এক বিষেশ “মানববন্ধন”। ধর্ম, বর্ণ, দল, মত নির্বিশেষে এই মানবন্ধনে অংশগ্রহন করেন অনেক প্রতিবাদী কণ্ঠ। তারা প্রায় দু-ঘন্টা যাবৎ রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিভিন্ন প্লেকার্ড, ব্যানার আর স্লোগান দিয়ে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেন।
উল্লেখ্য যে, ভারতে নতুন নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নকে ঘিরে বেশ কয়েকদিন থেকে বিরাট উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিরাজমান এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি একটি দাঙ্গায় প্রাণ হারায় অসংখ্য নিরীহ মানুষ। পুড়িয়ে দেয়া হয় তাদের ঘরবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এমনকি হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি ধর্মীয় উপাসনালয়। ভারতে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার পর এই প্রথম এতো বড় আকারে ধর্মীয় ছায়ায় এধরণের নৃশংসতায় মেতে উঠে একদল উগ্রপন্থী। এই ঘটনায় পুরো বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠে। এটিকে একটি পূর্ব পরিকল্পিত গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেন স্বয়ং কলকাতার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি এই ঘটনায় ক্ষমতাসীন বি.জে.পি সরকারের প্রচন্ড সমালচনা করেন এবং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াশিংটন পোস্টের মত সংবাদ মাধ্যম এটিকে বর্তমান সময়ের একটি সহিংসতম ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে।
মানববন্ধনের শুরুতেই দাঙ্গায় নিহতদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আয়োজিত এই কর্মসূচিতে টরন্টোস্থ বিভিন্ন পেশার নাগরিকদের পাশাপাশি অংশ নেন স্থানীয় বেশ কয়েকটি ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন। তাদের মধ্যে ছিলেন, টরন্টো দুর্গাবাড়ি, অন্টারিও আয়ামীলীগ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠি, মৌলভীবাজার এসোসিয়েশন, সিলেট সদর এসোসিয়েশন, নোয়াখালী এসোসিয়েশন, কুয়েত এলামনাই এসোসিয়েশন, এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার্স অন্টারিও, এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশী এগ্রিকালটারিস্টস ইন কানাডা, হবিগঞ্জ এসোসিয়েশন, ডানফোর্থ ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং সুনামগঞ্জ এসোসিয়েশন সহ আরো অনেক সংগঠন। অংশগ্রহনকারী প্রত্যেকে এই অমানবিক হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেন। তারা অবিলম্বে এইসমস্ত উগ্রবাদী হামলাকারীদেরকে গ্রেফতার করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। দেশটিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রতিবাদকারীরা মোদী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
আয়োজক জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব টরন্টোর সভাপতি দেবব্রত দে তমাল তার বক্তব্যে জানান, এই সংগঠনটি একটি অরাজনৈতিক এবং অসাম্প্রদায়িক সামাজিক সংগঠন। তিনি আরো বলেন, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ভিবিন্ন হত্যাকাণ্ড এবং সন্ত্রাসী হামলায় সংগঠনটি এধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করে আসছে। উদাহরণস্বরুপ তিনি বলেন, সংগঠনটি পূর্ববর্তী সময়ে ফ্রান্স এবং শ্রীলংকাতে সন্ত্রাসী হামলা, রোহিঙ্গা গণহত্যা, নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলা, সিলেটের একটি মন্দিরে হামলাসহ আরো অনেকগুলো হামলার প্রতিবাদ করেছে এবং ভবিষ্যতেও এধরণের কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে বলে মতামত ব্যক্ত করেন। পরিশেষে তিনি অংশগ্রহণকারী সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববন্ধনের আহ্বান জানিয়ে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
আয়োজিত মানববন্ধনটি সম্প্রচারে বিষেশ সহায়তায় ছিলেন ভোরের আলো, এন. আর. বি. টি. ভি., প্রথম আলো, দেশে বিদেশে, আজকাল, নতুনদেশ, জালালাবাদ বার্তা, নবদ্বীপ এবং দেশেরআলো সহ প্রথম সারির বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম। তাদের সবার প্রতি সংগঠনের পক্ষ থেকে বিষেশ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।