অনুজকান্তি দাশ : “আপনি কি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত কিংবা কোন লক্ষন বোধ করছেন। কোন সমস্যা নাই, করোনা ভাইরাস নিয়ে কখোনই আতংকিত হবেন না। কোন ধরণের ভয় পাবেন না। স্বাভাবিক চিকিৎসায় আপনি ভাল হয়ে উঠতে পারেন, যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোয়ারেন্টাইন কিংবা আইসোলেশন অনুসারে সঠিক চিকিৎসা গ্রহন করেন, তাহলে খুব শীগগিরই আপনি আগের মতো সুস্থ্য হয়ে যাবেন।
সামাজিক দূরত্বভেদে আপনাকে কোয়ারেন্টাইন কিংবা আইসোলেশনে থাকতে বলায় আপনি কখোনই মনে করবেন না আমরা আপনাকে দূরে ঠেলে দিয়েছি বা আমরা আপনার হতে দূরে সরে গিয়েছি। আসলে আপনার সুস্থ্যতার জন্য সাময়িক কিছু অসুবিধা হলেও এই পথ অবলম্বন করাই আপনার ক্ষেত্রে একমাত্র উত্তম পন্থা।
কোয়ারেন্টাইন কিংবা আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় এই কয়েকদিনে আপনি কখনোই আপনাকে একা মনে করবেন না। আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য আমাদের মেডিকেল টিম সার্বক্ষনিক আপনার পাশে আছে, থাকবে। আপনার যে কোন প্রয়োজনে আমাকে কিংবা আমাদের প্রশাসনিক পর্যায়ের যে কাউকে যে কোন সময় কল করবেন। আমরা যথাসময়ে আপনার দরজায় হাজির হয়ে যাবো।
আপাতত আপনার সুস্থ্যতার জন্য আপনি আপনার পরিবারের লোকজন হতে পৃথক হয়ে যান। বাথরুম সংযুক্ত একটি রুমে আপনার ব্যবহৃত সরঞ্জাম নিয়ে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে বাস করবেন। আমাদের পরবর্তী পরামর্শ ছাড়া একেবারেই রুমের বাইরে বের হবেন না। বাহির হতে লোকজন আপনাকে সহযোগিতা করবে। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। আপনার সামান্য ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের পরামর্শ অবলম্বনে এবং নিয়মিত ঔষধ সেবনে দেখবেন, মাত্র কয়েকদিনেই আপনি, আপনার পরিবার ও সমাজ সকলেই সুস্থ্যতা ফিরে পাবেন।
আমার কথাগুলো মনযোগের সাথে গ্রহন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি সুস্থ্য হলে আমাদেরকে ধন্যবাদ দেওয়ার কোন প্রয়োজন হবে না। বরং নিজের মতো করে এই কথাগুলো অন্যদেরকেও বুঝিয়ে দিবেন। আপনার মাধ্যমে অন্যরাও সুস্থ্য হওয়ার পথ খুঁজে পাবে।
করোনা ভাইরাস কোন অভিশাপ নয়। বর্তমানে সাধারণ প্রক্রিয়ায় এটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই করোনা হলে কাওকে অবহেলা, তাচ্ছিল্য কিংবা টিপ্পনীর ছলে ব্যবহার করা ঠিক নয়। পরস্পরের ভালোবাসা, সহযোগিতা আর সহমর্মিতায় আমরা করোনাকে জয় করবো নিশ্চয়।
আমরা স্বাস্থ্যকর্মীরা খুবই আশাবাদী। আপনিও আশা রাখুন। আপনি, আমি, আমরা, আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে কেবলমাত্র সামাজিক সচেতনতাবোধের মাধ্যমেই আমরা আমাদেরকে রক্ষা করতে পারলে তবেই দেশকে করোনা মুক্ত করতে পারবো।”
প্রিয় পাঠক, আপনারা অবগত আছেন যে, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পায়নি বাংলাদেশ। সারাদেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা আজ ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিনই নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কেউ কেউ সুস্থ্য হচ্ছেন, কেউ বা মৃত্যুকোলে ঢলে পরছেন।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে দেশকে করোনামুক্ত করার প্রত্যয়ে আজ যারা শক্ত হাতে হাল ধরেছেন। দিনে দিনে তারাও করোনার সংক্রমনে আক্রান্ত হয়ে পরছেন। করোনার এই করুন অবস্থায় দেশ দিশেহারা হয়ে ওঠেছে। আস্তা হারিয়ে ফেলছে জনগন। অবান্তর মৃত্যুর সাথে যেন সম্মুখ সাক্ষাৎ করার জন্য উন্মুক্ত রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে সকলেই।
তথাপীও হাল ছাড়েননি করোনার সাথে লড়াই-সংগ্রামের সম্মুখ যোদ্ধা তৃণমূলের স্বাস্থ্যকর্মীরা। এমনি একজন নিরলস স্বাস্থ্যসেবীর নাম বিনয় সিং রাউতিয়া। যিনি কিনা করোনা আক্রান্তদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সেবা প্রদানের পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের ভ্রান্ত ধারণাগুলোও ভেঙে দিচ্ছেন তার দৃষ্টান্তমূলক কর্মের মাধ্যমে।
কথায় বলে, কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে গড়ায়! আমার চারণের শুরুতেই একটি বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলাম। দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে করনীয় শীর্ষক সুন্দর এই সাবলীল বক্তব্যটি অত্যন্ত বিনয়ী ভাষ্যে করোনায় কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন কিংবা লকডাউনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে প্রচার করছেন বিনয় সিং।
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত স্যানেটারী ইন্সপেক্টর বিনয় সিং এর বাড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইছবপুর গ্রামে। পেশাগত দায়িত্বের কারণেই তিনি এ পর্যন্ত শতাধিক কোয়ারেন্টাইন ও লকডাউন পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন।
বিনয়ের ভাষ্যে তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত হওয়াটা কোন অপরাধ না। করোনা রোগীকে অবহেলা নয়, তাকে সহযোগিতা করতে হবে। করোনাক ভয় নয়, জয় করতে হবে।
স্বাস্থ্যকর্মী বিনয়ের ভূয়শী প্রসংসা করে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, বিনয় সিং শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একজন দায়িত্বশীল ব্যাক্তি। তিনি তার মানবিক কর্তব্যের কারণে দায়িত্বের চেয়ে অধিক শ্রম দিয়ে থাকেন। শ্রীমঙ্গলের স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিনয়ের সেবাময় দৃষ্টি তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে এমনটাই আশা করেন তিনি।