কুরবানী দিতে অপারগ ব্যক্তির জন্য সুখবর

মুফতী মাহমুদ হাসানঃ

আল্লাহ তা’আলা যাদেরকে আর্থিক সামর্থ্য দেননি ফলে তাদের ধারণা হতে পারে, আমরা কোরবানির এ ফজিলত থেকে বঞ্চিত; কিন্তু মহা করুণাময় তাদেরকে এ ফজিলত থেকে বঞ্চিত করেননি। তাদের জন্যও এই ফজিলত রেখেছেন। যাদের কুরবানী দেয়ার সামর্থ্য নেই তারাও যদি জিলহজের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে কোরবানির দিন পর্যন্ত নখ চুল ইত্যাদি কাটা থেকে বিরত থাকে ঈদের দিন সেগুলো কাটে আর অন্তরে এ নিয়ত রাখে যে  সামর্থ্য থাকলে আমিও তাদের মত কোরবানি দিতাম ।ইনশাআল্লাহ এর দ্বারা তারাও কুরবানীর সাওয়াব পাবে।
আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আসে যা: থেকে বর্ণিত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِرَجُلٍ: أُمِرْتُ بِيَوْمِ الْأَضْحَى عِيدًا جَعَلَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لِهَذِهِ الْأُمَّةِ، فَقَالَ الرَّجُلُ: أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ أَجِدْ إِلَّا مَنِيحَةً أُنْثَى أَفَأُضَحِّي بِهَا؟ قَالَ: لَا، وَلَكِنْ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِكَ، وَتُقَلِّمُ أَظْفَارَكَ، وَتَقُصُّ شَارِبَكَ، وَتَحْلِقُ عَانَتَكَ، فَذَلِكَ تَمَامُ أُضْحِيَّتِكَ عِنْدَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ.(ابو داود,رقم الحديث ٢٧٨٩،النساءي رقم الحديث.٤٣٦٥)
অর্থ : আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে কুরবানীর দিবসে ঈদ (পালনের) আদেশ করা হয়েছে। যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন। এক সাহাবী আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানিহা থাকে (অর্থাৎ অন্যের থেকে নেওয়া দুগ্ধ দানকারী উটনী) আমি কি তা কুরবানী করতে পারি? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, তবে তুমি চুল, নখ ও মোঁচ কাটবে এবং নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কুরবানী বলে গণ্য হবে। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৬৫
বিঃদ্রঃ:এই হাদীস দ্বারা উপলব্ধি হয়। যারা অভাব বা অন্য কোন কারণে কোরবানি করতে পারে না।তাদের জন্য উক্ত ১০ দিন নখ চুল না কাটা মুস্তাহাব।কেননা হাদীসে কুরবানীর দিনে নখ চুল কাটার নির্দেশ দেয়া টি প্রমাণ করে যে এর আগে কাটবে না।
এমনিভাবে এই হাদীস এটাও প্রমাণ করে যে যাদের কুরবানী করার সামর্থ্য নেই। তারাও উক্ত আমলের মাধ্যমে কুরবানীর সওয়াবের অধিকারী হতে পারে। অনেকে মনে করে এই ফজিলত শুধু তাদের জন্য যারা কুরবানী করবে। এই ধারণাটি ঠিক নয়
আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রা: বর্ণিত  হাদিস থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় এ ফজিলত গরিবের জন্যও।
এ প্রসঙ্গে আরো কিছু হাদিস
১. ওলীদ বিন মুসলিম বলেন, আমি মুহাম্মাদ বিন আজলানকে যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, আমাকে নাফে রাহ বলেছেন যে,
إن ابن عمر مر بامرأة تأخذ من شعر ابنها في الايام العشر فقال : لو أخرتيه إلى يوم النحر كان أحسن.
অর্থ : আব্দুল্লাহ ইবনে উমর এক নারীর নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। মহিলাটি যিলহজ্বের দশকের ভেতর তার সন্তানের চুল কেটে দিচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, যদি ঈদের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে তবে বড় ভাল হত। Ñমুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৫৯৫
২. এ সম্পর্কে আরেকটি বর্ণনা হল,
قال مسدد وحدثنا المعتمر بن سليمان التيمي سمعت أبي يقول : كان ابن سيرين يكره إذا دخل العشر أن يأخذ الرجل من شعره حتى يكره أن يحلق الصبيان في العشر.
মুতামির ইবনে সুলাইমান আততাইমী  বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি যে ইবনে সীরীন রাহ. যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা অপছন্দ করতেন। এমনকি এই দশকে ছোট বাচ্চাদের মাথা মুÐণ করাকেও অপছন্দ করতেন। Ñআল মুহাল্লা, ইবনে হাযম ৬/২৮
এসব দলীলের কারণে  বুঝা যায় সকলের জন্যই যিলহজ্বের প্রথম দশকে নখ, গোফ ও চুল না-কাটা উত্তম। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই, এ বিধানটি কুরবানিদাতার জন্য তাকিদপূর্ণ, তার জন্য তা সুন্নত। অতঃপর গরিবের জন্যও।
পরিশেষে…আমরা যারা কুরবানি দিতে একান্তই অপারগ তাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম-এর এ হাদিসটি আশার বাণী। এ হাদিসের ওপর আমল করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম-এর সুন্নাতকে বাস্তবায়ন করি এবং কুরবানির ছাওয়াব লাভ করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের কুরবানির ছাওয়াব লাভের তাওফিক দান করুন।

মুফতি মাহমুদ হাসান

দারুল হাদীস (এম. এ, ইসলামিক স্টাডিস)

জামিয়াতুল আবরার বসুন্ধরা ঢাকা

আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ (অনার্স) ঢাকা

দারুল ইফতা  (ইসলামিক আইন ও গবেষণা বিভাগ) ঢাকা

শেয়ার করুন