»শিক্ষাঙ্গন»খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজ অধক্ষের অনিয়ম-দুনীর্তির অভিযোগে শোকজ
খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজ অধক্ষের অনিয়ম-দুনীর্তির অভিযোগে শোকজ
জালালাবাদ বার্তা ডট কম ।
প্রকাশিতকাল:
আবু সায়েম মোহাম্মদ সা’-আদাত উল করীম:
জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজ পরিচালনায় অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠায় কলেজটির অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নড়েচড়ে বসেছেন বকশিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। কলেজটির সভাপতি ও বকশিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অধ্যক্ষ মো. বজলুল করিম তালুকদারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছন ইউএনও।
সাংবাদিক কাফি পারভেজের অভিযোগের ভিত্তিতে ২৮ আগস্ট অধ্যক্ষ মো. বজলুল করিম তালুকদারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ইউএনও অহনা জিন্নাত।
কারণ দর্শানের ওই নোটিশে শিক্ষক-কর্মচারীগণের শৃংখলা ও আইনের ৫৩ ধারার উপধারা ২ মোতাবেক আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব নোটিশদাতা কলেজের সভাপতি ও ইউএনওর কার্যালয়ে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে জামালপুরের জেলা প্রশাসক ও কলেজটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে অধ্যক্ষকে অপসারণের দাবি জানানো হয়েছে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. বজলুল করিম তালুকদারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, আত্মীয়করণ ও অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের ঘোরতর অভিযোগ থাকায় কলেজ পরিচালনায় দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। তার নির্দেশনায় কলেজ পরিচালনার সাথে যুক্ত থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন কলেজের সকল শিক্ষক-কর্মচারীরা। এতে করে কলেজে পাঠদানসহ কলেজের প্রশাসনিক কাযকর্মসহ সকল কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তাকে অধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারণ করে তার বিরুদ্ধে উঠা বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা কলেজে কর্মবিরতি পালনসহ বিভিন্নভাবে আন্দোলন করে আসছেন।
সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশের জন্য অধ্যক্ষের বিভিন্ন দুনীর্তি ও অনিয়মের তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার ফরমে অধ্যক্ষের কাছে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আবেদন করেছিলেন দৈনিক মানবকণ্ঠের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি কাফি পারভেজ। কিন্তু বিগত ছয় মাসেও অধ্যক্ষের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাননি সাংবাদিক কাফি পারভেজ। বকশিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা থাকায় উল্টো কাফি পারভেজকে নানাভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন। একপর্যায়ে বানোয়াট অভিযোগে কাফি পারভেজের বিরুদ্ধে ১৯ আগস্ট বকশিগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন অধ্যক্ষ মো. বজলুল করিম তালুকদার। থানায় জমা দেওয়া অধ্যক্ষের বানোয়াট অভিযোগ এবং নানাভাবে কাফি পারভেজকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে ২০ আগস্ট কাফি পারভেজ জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বকশিগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
জানা গেছে, গত ২৫ আগস্ট কলেজে এক ঘন্টার কর্ম-বিরতির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কলেজের অধ্যক্ষ বহিরাগতদের লেলিয়ে দিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী হামলা করান। ওই হামলায় কলেজের শিক্ষকসহ অন্তত ৬ জন গুরুতর আহত হন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বকশিগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা গত ২৭ আগস্ট অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে কলেজের সভাপতি ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ দলীয় সরকার পতন হলেও বকশিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কলেজটির অধ্যক্ষ মো. বজলুল করিম তালুকদার নিজের অনিয়ম-দুর্নীতিকে আড়াল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
সাংবাদিক কাফি পারভেজ জানান, কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর আমি গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তথ্য অধিকার আইন অনুসরণ করে কলেজটির অধ্যক্ষ মো. বজলুল করিম তালুকদারের কাছে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে আবেদন করি। আইন অনুসারে আবেদন করে তার কাছ থেকে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে তিনি আমাকে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিগত আওয়ামী লীগ দলীয় সরকার ক্ষমতা-চ্যূত হলে অধ্যক্ষ আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন। কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ আগস্ট তার কার্যালয়ে ফের তথ্য চাইতে গেলে তিনি আমার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। অবশেষে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়ে তাকে অপসারণ ও তার দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত করে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছি।
শোকজ প্রসঙ্গে কলেজটির অধ্যক্ষ মো. বজলুল করিম তালুকদারকে বার বার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশের বিষয়টি নিশ্চিত করে কলেজটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও বকশিগঞ্জে ইএনও অহনা জিন্নাত বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ মো. বজলুল করিম তালুকদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষক-কর্মচারীগণের শৃংখলা ও আইনের ৫৩ ধারার উপধারা ২ মোতাবেক অধ্যক্ষকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দাখিল করতে বলা হয়েছে।