»প্রচ্ছদ»হোমনা মাদ্রাসার সুপারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ দু’র্নীতি অভিযোগ
হোমনা মাদ্রাসার সুপারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ দু’র্নীতি অভিযোগ
জালালাবাদ বার্তা ডট কম ।
প্রকাশিতকাল:
আবু সায়েম মোহাম্মদ সা’-আদাত উল করীম:
জানা গেছে, গত কয়েক মাস আগে ৫ লাখ টাকার সরকারি বরাদ্দ পায় হোমনা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা। উক্ত টাকা শিক্ষকদের জন্য ১ লাখ, এতিম, দুস্থ ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ১ লাখ এবং অবশিষ্ট ৩ লাখ টাকা লাইব্রেরি, বিজ্ঞানাগার ও স্যানিটেশনসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজে ব্যয় করার কথা থাকলেও তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দের টাকা কোনো শিক্ষার্থীকে না দিয়ে পুরো ১ লাখ টাকা নিজে আ’ত্মসাৎ করেন। শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দের টাকা শিক্ষকদের মাঝে বণ্টন করা হলেও লাইব্রেরি, বিজ্ঞানাগার, স্যানিটেশন এবং অন্যান্য উন্নয়ন কাজের জন্য বরাদ্দকৃত ৩ লাখ টাকাও সঠিকভাবে ব্যয় করা হয় নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাদ্রাসার সুপার বিল- ভাউচারের মাধ্যমে সমুদয় টাকা সঠিকভাবে বণ্টিত দেখিয়েছেন। কিন্তু গত ২৭ মার্চ ২০২৪ খ্রি. তারিখে দেখানো শিক্ষার্থীদের মাঝে বণ্টিত টাকার ভাউচারটিতে শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর গণমাধ্যমকর্মীদের নিকট সন্দেহজনক মনে হয়। পরে বিষয়টি হোমনা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে (ইউএনও) অবহিত করলে তিনি উক্ত মাদ্রাসার সুপারকে তাঁর( ইউএনও) অফিসে ডেকে এনে শিক্ষার্থীদের টাকা যথাসময়ে এবং প্রকৃত শিক্ষার্থীদেরকে দেওয়া হয়েছে কি-না জানতে চান। এসময় সুপার শিক্ষার্থীদের টাকা পরিশোধ করার কথা বললেও ইউএনও’র জেরার মুখে তিনি প্রকৃত শিক্ষার্থীদের টাকা পরিশোধ করা হয় নি বলে স্বীকার করেন। এরপর ইউএনও তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষার্থীদের টাকা পরিশোধ করার নির্দেশ দিলে, সুপার গত ২১ আগস্ট ২০২৪ খ্রি. তারিখে ২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৭ জনকে মাদ্রাসায় ডেকে এনে প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে মোট ৮৫ হাজার টাকা বণ্টন করে দেন। কিন্তু অবশিষ্ট ৩ জন শিক্ষার্থীর টাকা উক্ত তারিখে পরিশোধ করতে পারেন নি। এখানেও যারা টাকা পাওয়ার যোগ্য এমন একাধিক শিক্ষার্থী টাকা পায় নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে, গত ৬ জুলাই ২০২৪ খ্রি. তারিখে উক্ত মাদ্রাসার জুনিয়র মৌলভী মো. ইব্রাহিম খলিলকে মোটা অংকের ঘুসের বিনিময়ে কোরাম করে ইবতেদায়ী প্রধান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ( মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮( ২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত) অনুযায়ী উক্ত পদে জুনিয়র মৌলভী পদে ৮ বছরের অভিজ্ঞতাসহ বয়সসীমা অনূর্ধ্ব ৩৫( সমপদের ইনডেক্সধারীদের জন্য বয়স শিথীলযোগ্য) থাকলেও তা মানা হয় নি। অর্থাৎ নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের বয়স প্রায় ৪৫ বছর।
শিক্ষার্থীদের নিকট টাকা পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘কবে টাকা এসেছে আমরা জানিনা। গত ২১ আগস্ট আমাদেরকে মাদ্রাসায় ডেকে নিয়ে ৫ হাজার টাকা করে দিয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে হোমনা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া জানান, ‘আমি গত ২৭ মার্চ ২০২৪ খ্রি. তারিখে শিক্ষার্থীদের টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি এবং অন্যান্য খাতের টাকাও যথাযথভাবে ব্যয় করা হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকে অতিরিক্ত ২০/২৫ হাজার টাকা জমা আছে।
ইবতেদায়ী প্রধান পদে নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো অনিয়ম করা হয় নি।এমপিও নীতিমালা অনুসরণ করেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে হোমনা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমা জানান, ‘টাকা ব্যাংকে জমা হওয়ার সাথে সাথেই শিক্ষার্থীদের টাকা পরিশোধ করতে বলেছি। কিন্তু তিনি যে, এখনও ওই টাকা পরিশোধ করেন নি তা আমার জানা ছিল না। আমি আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে সুপার কে আমার অফিসে ডেকে এনে শিক্ষার্থীদের টাকা সঠিকভাবে বিতরণ করা হয়েছে কি না তা জানতে চাই। সুপার প্রথমে টাকা পরিশোধের কথা বললেও পরবর্তীতে স্বীকার করেন যে, তিনি প্রকৃত শিক্ষার্থীদের টাকা পরিশোধ করেন নি। পরে গত ২১ আগস্ট ২০২৪ খ্রি. উক্ত টাকা প্রকৃত শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের নির্দেশ দিলে তিনি(সুপার) প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৫ হাজার টাকা করে ১৭ জনকে মোট ৮৫ হাজার টাকা প্রদান করেন। তবে পূর্বে পরিশোধিত ভাউচার/ রেজিস্টার এবং বর্তমান ভাউচারে শিক্ষার্থীদের করা স্বাক্ষরে গড়মিল পাওয়া গেছে। সুপার কেন দীর্ঘ কয়েক মাস শিক্ষার্থীদের টাকা বিতরণ করেন নি এবং গণমাধ্যমকর্মীরা জানার টাকা বিতরণ করলেন বিষটি আমার বোধগম্য নয়।,
মাদ্রাসা সুপার শিক্ষার্থীদের টাকা পরিশোধে এবং ইবতেদায়ি প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে যে অ’নিয়ম ও দু’র্নীতি করেছেন, এবিষয়ে আপনি সুপারের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সভাপতি ও ইউএনও বলেন, ‘আমি মৌখিকভাবে বিষয়টি জানতে চেয়েছি, লিখিতভাবেও জবাব চাওয়া হবে। জবাব সন্তুষজনক না হলে অবশ্যই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’