হোগলা পাতায় স্বপ্ন বুনছেন নারীরা

চরফ্যাসন (ভোলা) প্রতিনিধি।

চরের খাল বিল ও জলাশয়ের পাশে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠেছে শত শত হোগলা বাগান। চরফ্যাসন উপজেলায় রয়েছে একাধিক বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল। এসব চরের মধ্যে রয়েছে চর কুকরি-মুকরি, চর নিজাম, ঢাল চর সহ মূল ভূখণ্ডে নদী ও খালের কিনারার বিস্তৃত এলাকায় হোগলা পাতার বন। এলাকার বেশির ভাগ মানুষ কৃষি কাজের পাশাপাশি নদী ও খালে মাছ ধরে সংসার চালান। তবে এসব পরিবারের নারীরা আয়ের একটি বাড়তি উপার্জনের চাকা ঘুরাচ্ছেন হোগলা পাতায় দড়ি বুনে।

চরে প্রাকৃতিকভাবে বড় হওয়া হোগলা পাতা দিয়ে দড়ি তৈরি করে ক্ষুদ্র শিল্পের কাঁচা মালের জোগান দিচ্ছেন এসব নারীরা।
হোগলা পাতা মুড়িয়ে মুড়িয়ে দড়ি তৈরি করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। এসব দড়ি তৈরি করা হয় নানা ধরনের ক্ষুদ্র পণ্য দিয়ে।পাপোশ,মোড়া,চেয়ার,কলস, জগ,ব্যাগসহ বিভিন্ন রকমের শো-পিস,যা বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রায় লাভবান হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। দড়ি বানানোর পাশাপাশি নিজেরা ও বানাচ্ছেন হোগলা(মাদুর), নামাজের ছোট মছলা(ছোট মাদুর) যা বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছে দরিদ্র পরিবারগুলো।

হোগলা পাতায় দড়ি তৈরির বিষয় নিয়ে চর কুকরি মুকরি ইউনিয়নের বাসিন্দা বিবি নুরজাহান (৪৬),করিমুনেছা (৪০), চর নিজামের বাসিন্দা সিবা রানি মন্ডল (৩৮), মালভি রানি মন্ডল (৩৯) ও রফিকউল্লাহ মিয়ার (৪৫) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,চরাঞ্চল থেকে হোগলা পাতা এনে তারা নিজেরাই পাতা দিয়ে দড়ি বা রশি তৈরি করেন।

১০০ হাত দড়ি ১৫-২০ টকার মূল্যে সাভার, গাজীপুর ও উত্তরা এলাকায় পাইকারের মাধ্যমে সরবরাহ করেন তারা। পাইকারী মূল্যে বিক্রি করে ও ভালো লাভবান হচ্ছেন এসব পরিবার। নিজেদের পাশাপাশি শ্রমিকদের ও দড়ি বোনার কাজ দিচ্ছেন অনেকেই।
সিবা রানি বলেন, আমি ও আমার স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়ে নিয়ে এসব দড়ি বানাই।
তবে কোনো সংস্থা যদি আমাদের ক্ষণ ও প্রশিক্ষণ দেয় তাহলে আমরা নিজেরাই হোগলা পাতা দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করতে পারতাম। আমরা জানি না কিভাবে তা বানাতে হয়।

হোগলা ও মছলা (মাদুর) ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন,চরের গেরস্তের কাছ থেকে পাইকারী কিনে বাজারে খুচরা বিক্রি করি। ভালো আয় হয়। শীতে ঘরের মেঝে ঠান্ডা থাকায় অনেকে হোগলার মাদুর কেনেন তাই ব্যবসা এখন চাঙা।

ঢাকার এক পাইকারী ক্রেতা সুমন মজুমদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, তিনি চরফ্যাসনসহ ভোলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হোগলা পাতায় বোনা দড়ি পাইকারী ক্রয় করে তা আবার অধিক মুনাফায় ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তাদের কাছে বিক্রি করেন। এই পাইকারের সূত্র ধরে সাভার নবীনগরের উদ্যোক্তা নাজনীন সুলতানা(২৬) সাথে কথা হয়।

নাজনীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ইংরেজি বিভাগের একজন শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ও তার মা সুলতানা বিনতে ইয়াসমিন (৪৩) একটি ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের মাধ্যমে হোগলা পাতার দড়ি দিয়ে বিভিন্ন আসবাবপত্র বানান। যা বিক্রি করে তিনি লাভবান হচ্ছেন। তাদের তৈরি পণ্য বিদেশে রপ্তানির কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে ও জানান তিনি।

শেয়ার করুন