১২ অক্টোবর বিশ^ হসপিস অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস এসডিজি অর্জনে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে প্রশমন সেবা অন্তর্ভূক্তির জোরালো দাবি

  • জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে প্রশমন সেবা (প্যালিয়েটিভ কেয়ার) অন্তর্ভূক্তির জোরালো দাবি করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব পেলিয়েটিভি মেডিসিন। বিশ^ হসপিস অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবসের প্রাক্কালে সেন্টার ফর প্যলিয়াটিভ কেয়ারের আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি তোলেন আলোচকরা।  সংবাদ সম্মেলনে জানা যায়, বছরে দেশে প্রায় ৬ লক্ষ মানুষের প্রশমন সেবার প্রয়োজন। এতে আরো জানানো হয়, আগামী ১২ অক্টোবর বিশ^ হসপিস অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস ব্যপক পরিসরে পালিত হবে।

  • বিশ^ হসপিস অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য প্রফেসর কনক কান্তি বড়–য়া। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন ডা. মোঃ শহীদুল্লাহ শিকদার, উপ-উপার্চায (গবষেণা ও উন্নয়ন), বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর সৈয়দ মোজাফফর আহমদ এবং সেন্টার ফর প্যালিয়াটিভ কেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা. নিজামউদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো জিলন মিঞা সরকার। সংবাদ সম্মেলনে টিভি ব্যক্তিত্ব শারমিন লাকী উপস্থিত ছিলেন। প্যালিয়েটিভ কেয়ার একটি নাগরিক অধিকার উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, বিশ্ব জুড়ে নিরাময় অযোগ্য মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ ও তাদের ভুক্তভোগী পরিবারের জন্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ এক হয়ে সারা বিশ্বব্যাপী প্রতি অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শনিবার এই দিনটি উদযাপন করে। প্যালিয়েটিভ কেয়ার সম্পর্কে প্রচারণা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিস্তার ঘটানোই এই দিবসটির মূল লক্ষ্য।নিরাময় অযোগ্য রোগীর ক্ষেত্রে রোগের যে কোন সময় বা বয়স থেকেই রোগী এবং তার পরিবারের দৈনন্দিন কষ্টগুলোকে কমিয়ে আনা এবং জীবনের মান উন্নয়নে সহয়তা করাই এই সেবার মূল উদ্দেশ্য। সার্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা (ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ) এর প্রতি বাংলাদেশের সুদৃঢ় অবস্থানের অঙ্গীকারকে সম্মান জানিয়ে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে প্যালিয়েটিভ কেয়ার (প্রশমণ সেবা) কে অন্তর্ভুক্তকরণের দাবী তুলে এবারের প্রতিপাদ্য “আমার যতœ, আমার অধিকার”।প্যালিয়েটিভ কেয়ার (প্রশমন সেবা) নিরাময় অযোগ্য ও জীবন সীমিতকারী রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তি ও তার পরিবারের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক প্রয়োজন নিরূপণ ও সমাধানের জন্য একটি বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থা। নিরাময় অযোগ্য বিভিন রোগ যেমন ক্যান্সার, এইডস, কিংবা প্রান্ত্কি পর্যায়ের হার্ট ফেইলিউর, কিডনি অথবা ফুসসুসের রোগ, স্ট্রোক, স্মৃতিভ্রষ্টতা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত মানুষ এবং তাদের পরিবার এই সেবা ব্যবস্থায় উপকৃত হতে পারেন। সেবা দানের ক্ষেত্রে রোগী বা তার পরিবারের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। রোগির শেষ দিনগুলির ভোগান্তি কমানোর উদ্দেশ্যে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়। প্যালিয়েটিভ কেয়ার মৃত্যুকে তরান্বিত বা দেরী করায় না, বরং মৃত্যুকালীন ভোগান্তি লাঘবে চেষ্টা করে ।

  • সম্মেলনে  জানানো হয়, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় আড়াই কোটি মানুষের জীবনের শেষ দিনগুলিতে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজন হয়। সারা বিশ্বের এই চাহিদার ১০% এরও কম পূরণ করা সম্ভব হয়। বাংলাদেশে বছরের যে কোন সময় প্রায় ৬ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এবং ৩৯ হাজার শিশুর প্রশমন সেবার প্রয়োজন। ইকোনমিস্ট জার্নালের তথ্য অনুযায়ী প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রাপ্যতার বিচারে পৃথিবীর ৮০ টি দেশের মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৯তম। সারা দেশে বিক্ষিপ্ত ভাবে মাত্র অল্প কিছু স্থানে এই সেবার প্রচলন আছে।প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি অব বাংলাদেশের আজীবন সদস্য টিভি ব্যক্তিত্ব শারমিন লাকী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গণমাধ্যমের আরো মনোযোগ এই সেবা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করবে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুবন্ধ ৬৭.১৯ তে প্যালিয়েটিভ কেয়ারকে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে অন্তর্ভুক্তকরণের সুপারিশ করা হয়েছে যার অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশ বাংলাদেশ জানিয়ে ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র (এসডিজি) ৩.৮ এ উল্লিখিত সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিধি (ইউএইচসি) অর্জনের অন্যতম প্রধান অংশ এই প্যালিয়েটিভ কেয়ার। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের আগ্রহ লক্ষ্য করেছি এ বিষয়ে। আশা করি রাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে দ্রুত ভূমিকা রাখবে।তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ার ২০০৮ সাল থেকে এ সেবা প্রদান করে আসছে। বহিঃর্বিভাগ, অন্তঃবিভাগ, দিবা সেবা, লিম্ফিডিমা কেয়ার, রেজিস্টার্ড রোগীদের জন্য ২৪ ঘন্টা টেলিফোন সার্ভিস, হোম কেয়ার সেবা ছাড়াও করাইল এবং নারায়ণগঞ্জে কমিউনিটি লেভেলে জনসাধারণের মাঝে এই সেবা প্রদান করে আসছে এই সেন্টার। ডাক্তার, নার্স, প্যালিয়েটিভ কেয়ার সহকারী (পিসিএ), স্বেচ্ছাসেবক এর পাশাপাশি রোগীর পরিবার বা পরিচর্যাকারীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে এই সেন্টার।বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর কনক কান্তি বড়–য়া জানান, বিশ^বিদ্যালয় নানা ভাবে প্রশমন সেবার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে চেষ্টা করে চলেছে। তিনি আরো বলেন, দেশ যত অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাক না কেনো মানবিকতা বোধ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।

শেয়ার করুন