মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
৬ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয়েছিলো মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, রাজনগর, কুলাউড়া ও বড়লেখা উপজেলার। নিরীহ বাঙালি দীর্ঘ ৯ মাস স্বাধীনতাযুদ্ধ শেষে এদিন মুক্তির স্বাদ পেয়েছিলো।
শ্রীমঙ্গল: ১৯৭১ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য আলতাফুর রহমান, কমান্ডার মানিক ও ফরিদ আহম্মদ চৌধুরীর নেতৃত্বে শ্রীমঙ্গলে গঠিত হয়েছিলো মুক্তিবাহিনী। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সেদিন মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলো এ অঞ্চলের চা শ্রমিকরা।
২৩ মার্চ শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সামনে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমেই শ্রীমঙ্গলে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে তুমল লড়াই শুরু করেন তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ শেষে এদিনে শহরের ভানুগাছ সড়ক দিয়ে আবারও পৌরসভা চত্বরে প্রবেশ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। সেখানে পুনরায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠেন তারা।
রাজনগর: এদিনে হানাদার মুক্ত হয় জেলার রাজনগর উপজেলা। সেদিন পাক বাহিনীকে হটিয়ে উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নে প্রথম বিজয় পতাকা উত্তোলন করে আমজনতা। পরবর্তীতে যৌথবাহিনীর কামান্ডার কর্নেল এমএ হামিদ লাল-সবুজের বিজয় পতাকা উড়ান রাজনগরের ক্লাব প্রাঙ্গণে। সেখানেই রাজনগর মুক্ত ঘোষণা দেওয়া হয়।
১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ রাজনগর পোর্টিয়াস উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রথম প্রতিরোধ সমাবেশের মধ্যেদিয়ে রাজনগরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে পাকদেরকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে থাকে যৌথবাহিনী।
৪ ডিসেম্বর ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল মৌলভীবাজার হয়ে রাজনগর পৌঁছেন। তারা উদনা চা বাগান অবস্তানরত পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণের চুড়ান্ত প্রস্তুতি নেন। ৫ ডিসেম্বর প্রচন্ড শীতে মুক্তিযোদ্ধারা প্রবেশ করেন উদনা চা বাগানে। ত্বড়িত আক্রমণ করেন পাকসেনাদের ওপর। টানা যুদ্ধের পর ৬ ডিসেম্বর ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাকসেনারা পালাতে শুরু করেন। এদিনে রাজনগর শত্রু মুক্ত হয়।
কুলাউড়া: স্বাধীনতা যুদ্ধের এদিনে মুক্ত হয় হানাদারদের বড় ঘাটি কুলাউড়া উপজেলা। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর গাজীপুর চা বাগানে শেষ যুদ্ধে পাকদেরকে পরাজিত করে জয় ছিনিয়ে আনে মুক্তিযোদ্ধারা।
বড়লেখা: মুক্তির স্বাদ পায় জেলার সীমান্তবর্তী বড়লেখা উপজেলা। ১৭৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বড়লেখার প্রায় ৩২৫টি গ্রামের মুক্তিকামী মানুষ হুকার তুলেছিলো হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। সাবেক এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজীর নেতৃত্বে হানাদারদের বিরুদ্ধে অসংখ্য ছোট বড় আক্রমণ চালিয়ে যুদ্ধের শুরুতেই বড়লেখার বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ গড়ে তোলে বড়লেখাবাসী। ১৯৭১ সালে এদিনে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে নাকাল হানাদাররা বড়লেখা ছাড়তে বাধ্য হয়। ভোরে বড়লেখা পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হয়। পরে বর্তমান উপজেলা পরিষদের সামনে এক বিজয় সমাবেশে বড়লেখাকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয়।
৬ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় মৌলভীবাজারের ৪ উপজেলা
শেয়ার করুন